শুক্রবার, ১১ আগস্ট, ২০১৭

অবুঝ মনের ভালোবাসা

-মুহম্মদ কবীর সরকার
ছোট্ট মেয়ে মিম। এখনো স্কুলে ভর্তি হয়নি। কত প্রশ্ন করে বাবা-মাকে জব্দ করে।এটা কি, ওটা কি? নতুন পৃথিবীর প্রতি যেন তার কৌতূহলের শেষ নেই। বাবা মা কক্সবাজারের একটি প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা।
তাই তারা খুব সুন্দর করেই প্রশ্নের উত্তর দেন। একটু একটু করে সে পৃথিবীকে জানছে ।
-হঠাৎ একদিন বাবা বাজার থেকে একটি বই নিয়ে আসলেন। মা এখন থেকে তুমি এই বই থেকে শিখবে। মিমের আনন্দ দেখে কে! তার সকল সহপাঠীদের বইটি দেখালেন। আমার বই আছে! তোমাদের আছে কি?
-মিম বই পড়তে বসলো।
অ তে অজগরটি আসছে তেড়ে।
আ তে আমটি আমি খাবো পেড়ে।
প্রত্যেকটি বর্ণ ও ছন্দ শেষ হলে মিম বাবাকে মস্ত বড় প্রশ্ন ছুড়ে।
বাবাও সুন্দর করে উত্তর দেন।
ভ তে আল্লাহকে কর ভয়।
-আচ্ছা আব্বু আল্লাহ কে? তাকে কেন ভয় করবো?
-এই পৃথিবীর সব কিছু আল্লাহ তালা সৃষ্টি করেছেন।তোমাকে আল্লাহ তালা সৃষ্টি করেছেন। তাকে ভয় করতে হয়।আমাদের তার কথা মত চলতে হয়। নামাজ, রোজা তারই আদেশ।
-তারপর পড়... ম'তে ময়না পাখি কথা কয়।
-আচ্ছা আব্বু পাখি কি কথা বলতে পারে?
কিছু কিছু পাখি আছে তাদের কথা শিখালে কথা বলতে পারে।
-পাখি গান গায়?
-হ্যা গান গায়, নাচতে ও পারে।
পাখি কি আমার মতো পড়তে পারবে?
শিখালে পারবে।
-ও কি মজা!
আমার একটা পাখি চাই।আমাকে পাখি এনে দিতে হবে। মিম বায়না ধরলো বাবার কাছে।
-না মা পাখিদের আকাশেই সুন্দর দেখায়। তোমাকে কেউ যদি খাচায় আটকে রাখে তোমার কেমন লাগবে?
-আমি এতো কিছু বুঝিনা আমাকে পাখি এনে দিতে হবে ব্যস ।
-আচ্ছা এনে দিব। এখন পড়।
-না পড়বো না। পাখি এনে না দিলেই পড়বো। নয়তো আর পড়বো না বলে দিলাম।
তো কি আর করার আদরের মেয়ের আবদার। বাবা গেল পাখি আনতে। বাজার থেকে সুন্দর চেয়ে একটি পাখি নিয়ে আসলো।
মিমের আনন্দ দেখে কে! পাখির নাম ও রেখে ফেললো তার নাম অনুসারে মিতু। ওই মিতু তুমি কথা বলতে পারো? মিতু কোনো কথা বলে না।
গান গায়তে পাড়ো? নাচতে পাড়ো, নাচতে? কোনো সাড়া শব্দ পেলো না।
বাবা বাজার থেকে তোমায় এনেছে আমার সাথে পড়বে বলে। পড়া অনেক মজা। নতুন নতুন কিছু জানা যায়। তোমার ও ভালো লাগবে। মিতু, কথা বলছো না যে।
বাবা মিতু কথা কয় না।
-পাখিওয়ালা বাবাকে শিখেছে কি ভাবে কথা ফুটাতে হয়।
সে ভাবে পাখির কথা ফুটালো।
-মিম পাখিকে অভিনয় সহকারে শিখাচ্ছে_ বল আমি মিম তুমি মিতু।
-মিতু ডানা দিয়ে নিজেকে দেখি বলে "আমি ইম", আর মিমকে দেখিয়ে বলে 'তুমি ইতু'।
ওহু না, হয়নি আমি মিতু না তুমি মিতু।
বল বল। পাখি ও বলে 'বল বল'।
আব্বু পাড়ছি না শিখাতে।
বাবা বললো মিতুকে আগে নাম শিখাও।
মিতু বল, "আমি মিতু"। মিতু ডানা দিয়ে নিজেকে দেখিয়ে বলছে 'আমি ইতু'।
তারপর মিমের নাম শিখালো।
তারপর কি শিখানো যায় মিম ভাবছে।মেহমান আসলে তাদের সমাদর।
মিতু বলো...
"মিম, কুটুম আসছে বাড়ি
পিড়ি দাও তাড়াতাড়ি,
নয়লে কিন্তু করবে আড়ি
এখনি সে ছাড়বে বাড়ি!"
এই ছন্দটি শিখাতে তার অনেকদিন সময় লাগলো। এখন মিতু অপরিচিত মুখ দেখলেই ছন্দটি সুরে সুরে বলে উঠে আর নেচে উঠে।
এই মিতু নিয়ে মিমের সকাল, বিকাল, সন্ধ্যা হয়।পাখিকে কত কিছু শিখানোর বাকি।
বাবা ডাকে মিম পড়তে এসো।
বাবা আসছি। মিতু কে নিয়ে আসি।
অ'তে অজগরটি আসছে তেড়ে
মিতু ও বলে "অ'তে অজগরটি আসছে তেড়ে"!
এই ভাবে তার সুন্দর সুন্দর দিনগুলি যাচ্ছিল। হঠাৎ একদিন ঘুম থেকে উঠে দেখে পাখিটি খাচায় নেই। কত খুঁজাখুঁজি। কোথায় গেল?কে নিল? তারপর মিমের কি কান্না। সারাদিন ভাত খায়নি।বাবাকে বলে বাবা আমার পাখিটা এনে দাও। আমি পাখিটা চাই।
-বাবা বলে এনে দিব মা। চলো সমুদ্র সৈকতে ঘুরে আসি। সমুদ্র সৈকতে অনেক পাখি ডাকাডাকি করে।তোমার ভাল লাগবে মা।
-আচ্ছা যাবো, সেখানে কি আমার মিতু আছে?
-বাবা এর কোনো উত্তর দিল না।
-তারপর তারা কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের উদ্দেশ্যে যাত্রা দিল। সেখানে কত পানি, কত পাখি। তাদের কিচিরমিচির ডাক। সাগরের ডাক মিলেমিশে একাকার।
এই পাখিদের ভিড়ে মিম মিতুকে খুঁজে বেড়াই । হঠাৎ অনেকগুলি পাখির মরদেহ দেখতে পেলো। সাগর তীরে পড়ে আছে। মিম কাছে গিয়ে দেখলো।
বাবা এই পাখিগুলি মরলো কেন?
তোমরা যে চিপস খাও, চিপসের কাগজ অর্থাৎ পলিথিন পঁচে না। তারা পরিবেশের অনেক ক্ষতি করে। এই সব ময়লা সাগরে এসে পতিত হয়। এর অতিক্ষুদ্র কণা খাবারের মত দেখা যায়। এই ময়লা পাখিরা খেলে মারা যায়।
মিম মনে মনে ভাবে এই পাখিদের কিভাবে বাঁচানো যায়! আমি আর চিপস খাবো না। বন্ধুদের বলবো। চিপস না খেয়ে পলিথিন কাগজ জমিয়ে তা দিয়ে ফুল বানাবো।এই ফুল দিয়ে ঘর সাজানো যাবে!
তবেই পাখিরা উড়বে, কিচিরমিচির ডাকবে, গান গাইবে ও নাচবে!
মিমকে তার বাবা ডেকে বললো "মিম কি ভাবছো?"
এই পাখিদের বাঁচাতে হবে বাবা।
মিমের পরিকল্পনা শুনে বাবা অনেক খুশি।
বাবা বললো আমিও তোমাদের সাথে থাকতে চাই।এই কাজে আমি অংশগ্রহণ করবো।
-কি মজা কি মজা বাবাও থাকবেন কি মজা।
সাগর ছেড়ে মিম চলে আসবে এমন সময় হয়তো ভুল শুনছে, নয়তো ভাবনায় চলে আসছে..।
সে দেখতে পেল এক দল পাখি থেকে একটি পাখি তার উড়া থামিয়ে সঙ্গিদের ছেড়ে সুরে সুরে নাচতে গাইতে লাগলো...
মিম, কুটুম আসছে বাড়ি
পিড়ি দাও তাড়াতাড়ি,
নয়লে কিন্তু করবে আড়ি
এখনি সে ছাড়বে বাড়ি!
সহসা মীমের দুই চোখসলিল থেকে এক বিন্দু নোনাজল যেন তার গাল বেয়ে সাগরের নোনাজলে মিশে একাকার হয়ে গেল।
মাসিক ম্যাগাজিন ভোঁদৌড়ে প্রকাশিত
মুহাম্মদনগর,বায়জিদ বোস্তামি,চট্টগ্রাম
শিক্ষার্থীঃ পদার্থ বিজ্ঞান ডিপার্টমেন্ট
সরকারী সিটি কলেজ, চট্টগ্রাম।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন