শুক্রবার, ১১ আগস্ট, ২০১৭

বাঘ নিয়ে যত কথা

বাঘ নিয়ে যত কথা
মুহম্মদ কবীর সরকার
বাঘ বিড়াল পরিবাবের সবচে বড় প্রাণী অর্থাৎ বাঘ একটি বিড়াল জাতীয় প্রাণী। বিড়াল!কি অবাক হলে। হ্যা বনবিড়াল। বাঘ লম্বায় ৩.৩ মিটার হয়।এরা স্তন্যপায়ী ও মাংসাশী প্রাণী হয়।
-বাঘ বললে এক মুহূর্তের জন্য সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার আমাদের চোখে ভেসে উঠবে। ভেসে উঠবে হলুদ থেকে হালকা কমলা রঙের ও কালো ডোরাকাটা দাগওয়ালা বাঘকে। হয়তো তার দাঁতের কথা মনে করে ভয়ে চমকে উঠবে। হ্যা উঠারই কথা , শিকার করার জন্য সৃষ্টিকর্তা এদের দিয়েছেন ভয়ানক সব অস্ত্র। এদের ক্যানাইন দাঁত ৪ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়, যা বিড়াল পরিবারের মধ্যে সবচেয়ে বড়। তাদের দাঁত দিয়ে মানুষের মাথার খুলিকে ডিমের খোসার মত ভেঙ্গে ফেলতে পারে!আমাদের মাথার খুলি কি এতই নরম?প্রশ্ন আসতেই পারে! তা নয়, কারণ এদের কামড়ের জোর ১০৫০ পিএসআই পর্যন্ত হয়। এদের আছে গুটিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা যা দ্বারা খুব শক্ত বস্তুকে সহজে ভেঙ্গে ফেলতে পারেন।
যুক্ত ব্লেডের মত ধারালো বাঁকানো নখর। সামনের পায়ের নখর ৩ ইঞ্চিরও বেশি লম্বা হয়।যা দ্বারা শিকারকে খুব সহজে ভাগে আনতে পারে।
বাঘেরা উৎ পেতে শিকার করে। বাঘেরা ঘন্টায় ৫০ থেকে ৬৫ কিঃমি পর্যন্ত দৌড়াতে পারে। পানিতে ও বেশ দাপটের সাথে সাঁতরাতে পারে। পানিতে বাঘের গতিবেগ ঘন্টায় ৩২ কিঃমিঃ হতে পারে যা একজন দক্ষ সাতারোর চেয়ে কম নই বরং বেশি।সুতরাং পানিতে মানুষের চেয়ে বাঘেরই দাপট বেশি । ভয় পাচ্ছো, ভয় পাওয়ার কিছু নেই বাঘ নরখাদক নয়, বাঘ খায় সেই প্রাণীদের যারা সবুজ ঘাস খেয়ে জীবন ধারণ করে যেমন হরিণ। তবে হ্যা বাঘ বেশি ক্ষুধা পেলে নরখাদক হয়ে পড়ে এমনকি নিজের বাচ্চাদের খেতেও পিচপা হয় না । তাই বাঘিনী তার বাচ্চাদের খুব যতনে লুকিয়ে রাখে।বাঘের বিভিন্ন রঙ ও আকার ভেদে পার্থক্য করা হয় যেমন কালো, সাদা, সোনালি ইত্যাদি । তাদের আবার নামও আছে সাদা বাঘ, বালি বাঘ,মালয় বাঘ,সুমাত্রীয় বাঘ,সাইবেরীয় বাঘ,দক্ষিণচীন বাঘ ইত্যাদি এর মধ্যে বাংলা বাঘ অধিক পরিচিত। রয়েল বেঙ্গল টাইগার আমাদের জাতীয় পশু।শুধুই আমাদের জাতীয় পশু নই বাঘের একটি প্রজাতি ভারত ও মালয়েশিয়ার ও জাতীয় পশু। রয়েল বেঙ্গল টাইগারের বসবাস সুন্দরবন এলাকায়। এক সময় নাকি সারা বাংলা জুড়ে বাঘ ছিল।সেই সুবাদে দেশকে বোধ হয় বাঘের দেশ বলা হত। এখন আর সেই রকম বাঘ চোখে পড়ে না। ২০১৫ সালের শেষ বাঘ গণনায় ১০৬টি বাঘ সুন্দরবনে দেখা মিলে। মানুষের অতিরিক্ত চাপে, বনভূমি দখল করে, বাঘ শিকার করে, চামড়া প্রাচার করে বাঘের দেশ থেকে বাঘকে নিশ্চিহ্ন করে দিচ্ছে। হয়তো একদিন এই বাঘের দেশ থাকবে বাঘ থাকবে না। হয়তো বাঘ থাকবে শুধু দাদুর গল্পে, আর ইতিহাসের পাতায়।
যেমন ইতিহাসের পাতায় আজো স্মরণ হয়ে আছে টিপু সুলতানের কথা। হ্যা টিপু সুলতানের কথা না বললেই নই।টিপু সুলতান একজন বীর যোদ্ধা ছিলেন। ইংরেজদের বিরুদ্ধে তিনি বীরত্ব সহকারে যুদ্ধ করেন। টিপু সুলতানের পতাকায় লিখা ছিল বাঘই ভগবান মানে তিনি বাঘকে ভগবানের মত পূজো করতো। বাঘ ছিল তার প্রেরণার উৎস। ছোটবেলা থেকেই টিপু, বাঘের গল্প শুনতে ভালোবাসতেন। বাবাই তাঁকে বাঘের গল্প শোনাতেন। কিশোর বয়সে টিপু সুলতান বাঘ পুষতে শুরু করেন। বাঘ নিয়ে তাঁর ব্যঘ্রতার শেষ ছিলো না। বাবার মৃত্যুর পর তিনি যখন সিংহাসনে আরোহণ করলেন, তখন বাবার পুরোন সিংহাসনটি তিনি ঠিক পছন্দ করলেন না। তাই তিনি তৎকালীন শ্রেষ্ঠ কারিগর দিয়ে কাঠের ফ্রেমের উপর সোনার পাত বসিয়ে তার উপর মণিমুক্তা ও রত্নখচিত একটি সিংহাসন বানিয়ে নিলেন, যাকে বরং "ব্যাঘ্রাসন"ই (Tiger throne) বলা যায়। কারণ আট কোণা ঐ আসনটির ঠিক মাঝখানে ছিলো একটি বাঘের মূর্তি। ৮ ফুট চওড়া আসনটির রেলিংয়ের মাথায় বসানো ছিলো সম্পূর্ণ স্বর্ণে তৈরি দশটি বাঘের মাথা, আর উপরে উঠার জন্য ছিলো দুধারে, রূপার তৈরি সিঁড়ি। আর পুরো ব্যাঘ্রাসনটাই ছিলো বাঘের শরীরের মতো ডোরাকাটা।তিনি বিশ্বাস করতেন" ভেড়া বা শিয়ালের মতো দু'শ বছর বাঁচার চেয়ে বাঘের মতো দু'দিন বেঁচে থাকাও ভালো"
তাছাড়া আমরা সবই তো শেরে বাংলা এ. কে. ফজুলুল হকের নাম শুনেছি তার এই নাম কিন্তু ছিল না। তার নাম ছিল আবুল কাশেম ফজলুল হক। তাহলে ওটা কোথায় থেকে এল! হ্যা শেরে বাংলা (বাংলার বাঘ) তার উপাধি। তিনি বাংলার জন্য সাহসিকতার সাথে রাজনীতি করেছেন।তাই তাকে বাংলার বাঘ উপাধি দেওয়া হয়।
তাছাড়া আমাদের ক্রিকেট বোর্ডের প্রতীক ও কিন্তু বাঘ। এই বাঘকে নিয়ে কত গল্প, কত বাগধারা শুনে শুনে আমরা বড় হয়েছি যেমন দুই বাঘ এক বনে যায়গা হয়না এই বাগধারাটি আমার কাছে খুব পরিচিত কেননা আমি আর আমার বোন যখন ঝগড়া করতাম নানু এই বাক্যটিই বেশি প্রয়োগ করতো। যাকগে_ এখন
যে বাঘ নিয়ে এত কিছু সে যদি পৃথিবী থেকে হারিয়ে যায় তাহলে হারাবে আমাদের গৌরব মর্যাদা। আসুন আমরা আমাদের জাতীয় পশুকে রক্ষা করতে সচেতন হয় জনমত গড়ে তুলি। আর এক সাথে বলি...
সুন্দরবন বাঁচলে বাঁচবে দেশ
অটুট থাকবে বাঘের দেশ।

শিক্ষার্থীঃচট্টগ্রাম

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন