বৃহস্পতিবার, ২৫ জানুয়ারী, ২০১৮

তেরোটি লাল গোলাপ

-মাহ্দী কাবীর



এক
তোমার খোঁপার ফুলটা দিলে
বল না, এমন কি হয় ক্ষতি?
সারাজীবন ভালো গো বাসবো
দিলাম বন্ধু প্রতিশ্রুতি!
এখন আমার ভালো লাগে কালো কাক। অবাক হয়ে দেখি তার শরীর। দেখি তার স্নান সেরে আসা ভেজা পালক। কতই না সুন্দর কারুকাজে খুচিত তার শরীর! একজন প্রেমিকই সেই রূপ উপভোগ করার অধিকার রাখে। আপনারা হয়তো ভাবছেন আমি প্রেমে পড়েছি কি না? হ্যা, আমি প্রেমে পড়েছি। প্রেমে পড়েছি এক কালো মেয়ের। আপনারা হয়তো উপহাসের সহিত বলাবলি করছেন, কালো মেয়ের প্রেমে পড়ে নাকি কেউ! তাহলে বলি শুনুন, আপনারা কৃষ্ণচূড়া ফুল দেখেছেন কখনো? পড়েছেন তার রক্তিম রূপের প্রেমে? নাকি দৃষ্টিশক্তি লোপ পেয়েছিল তার তীব্র রূপের আলোকছটা চোখে পড়তেই? তার টকটকে লাল রঙ দিয়ে কাছের দূরের সকল প্রেমিকদের আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়। আপনি কি তাহলে কৃষ্ণ নাম আছে বলেই কৃষ্ণচূড়ার কাছে যাননি? গেয়েছিলেন তো! ওই ফুলের নাম কৃষ্ণচূড়া সত্ত্বেও গিয়েছিলেন, কারণ আপনি জানেন সেই ফুল আদৌ কৃষ্ণ-টৃষ্ণ না। কিন্তু আপনি কালো মেয়ের কালো রূপ দেখতে পাননি, তাই তার ধারেকাছেও জাননি। রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল দেখেছিলেন কালো মেয়ের রূপ। তাই রবীন্দ্রনাথ গেয়েগেছেন_
কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি, কালো তারে বলে গাঁয়ের লোক।
মেঘলা দিনে দেখেছিলেম মাঠে কালো মেঘের কালো হরিণ-চোখ।
আর নজরুল গেয়েছিলেন-
কালো মেয়ের পায়ের তলায় দেখে যা আলোর নাচন।
(তার) রূপ দেখে দেয় বুক পেতে শিব যার হাতে মরণ বাঁচন।
এখন আমি বসে আছি তীর্থেরকাকের মত তার অপেক্ষায়!আজ আমাদের দেখা করার কথা।আমাদের প্রেমের চার বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে। যদিও আজকেই তাকে আমি প্রপোজ করবো। তাহলে আবার প্রেমের চার বছর হয় কিভাবে? আপনাদের মনে এইটুকু প্রশ্নের আবির্ভাব হতেই পারে। এই প্রশ্নের উত্তর পেতে যে আপনাকে আমার মতো তার অপেক্ষা করতে হবে।
তাকে যদিও প্রতিদিনি দেখি তবে এইভাবে এই প্রথম দেখা হচ্ছে আমাদের। সাথে নিয়ে এলাম তেরোটি লাল গোলাপ । তেরোটি গোলাপ এনেছি কেন বুঝলেন না তো? আপনার বুঝার দরকার নেই! সে এসেই বুঝে নিবে! আমি ভালোবাসা কি বুঝতাম না। সেই আমায় শিখিয়েছে ভালোবাসা কি। ওহ দুঃখিত! তার নামই তো বলা হল না। তার নাম মীম। অবশ্য নামটা আমার দেওয়া। মীম নামটা আমার অনেক প্রিয়। নামের অর্থই 'ভালোবাসা' কিনা তাই বোধহয়! সে এখনো জানে না তাকে যে মীম নামে ডাকবো!
দুই
মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে আমি। বড় হয়েছি গ্রামে। পড়াশুনার সুবাদে চট্টগ্রাম আসা। চট্টগ্রাম এসে অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে আমাকে। পড়াশোনার খরচ, থাকা খাওয়ার খরচ নিয়ে। কখনো কোচিং, কখনো প্রাইভেট টিউটশনি করে আমাকে এই শহরে টিকে থাকতে হয়েছে। তখন আমার কাছে প্রেম ছিল নিছক মরীচিকার মতো। একে একে এই শহরের বুকে কেটে গিয়েছিল অনেকগুলি বছর। যেমন ঝরে যায় শীতের ঝরা পাতার মতো ফুলহীন বসন্ত। তখন সালটা ছিলো ২০০৮।একদিন মীম আসলো বসন্ত নিয়ে আমার জীবনে।
বেশ কিছু ছাত্র ছাত্রী পড়তে আসতো তখন।মীম ছিল তাদের মধ্যে একজন। মীমের চুল ছিল বেশ লম্বা, চুলের অগ্র নিবাস ছিল কটিদেশে। এই ঘন লম্বা কেশের প্রেমে পড়েই বোধহয় জীবনানন্দ লেখেছিলেন,
চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা,
মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য; অতিদূর সমুদ্রের ’পর
হাল ভেঙে যে-নাবিক হারায়েছে দিশা।
প্রতিদিন বড় খোঁপায় গেঁথে আসতো পীচ ফুল। সবার শেষে বের হত কোচিং থেকে। তখন তার খোঁপা খোলে ফুল আমার বেঞ্চে রেখে চলে যেত। আমি কখনো সেসব খেয়ালে নেইনি। এই ভাবে কেটে গিয়েছিল কয়েকমাস।আবার কখনো খোঁপায় বেঁধেছিলেন চন্দ্রমল্লিকা। তখনোও এসব আমলে নিতাম না। পরে থাকতো ফুল ফুলের মতো। আমি কাউকে কখনোই ভালোবাসতে চাইনি। আসলেই ভালোবাসাটা একান্তই মনের ব্যাপার, আমি চাইলেই কি আর না চাইলেই কি! প্রায় একবছর মীমের কাজ এই ভাবেই চলতে থাকলো। কখনো চন্দ্রমল্লিকা ফুল কখনোবা পিচ জাতীয় ফুল। হঠাৎ আমি ভাবলাম ফুলেরগন্ধটা দেখি কেমন হয়! সেই কৌতূহলে ফুল ছোঁলাম। এ যেন ফুল নয় ফুলের চেয়ে তার চুল ছোঁলাম। কেননা ফুলেরগন্ধের চেয়ে চুলের গন্ধই বেশি ব্যাপনীয় হচ্ছে। তাই কৌতূহল বশত পিচ ফুলও চন্দ্রমল্লিকা ফুলের অর্থ খুঁজতে লাগলাম। আর নিয়মিত ফুলেরগন্ধ নামে মীমের চুলের গন্ধ নেওয়া যেন আমার নেশা হয়ে দাঁড়ালো। যদি একদিন সে ভুল করে ফুল আমার বেঞ্চে ফেলে না যায় তাহলে আমার দিনটা কাটা আদৌ কি সম্ভব? আমি এখন নেশাগ্রস্থ এক মানব। যার চুলের গন্ধ না হলে একদিনও চলে না। তারপর একদিন খুঁজে পেলাম এই চন্দ্রমল্লিকা ও পিচ ফুলের মানে কি? তখন সকল দীনতা ভুলে গিয়েছিলাম আমি। তখন আমাকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী ব্যক্তি মনে হচ্ছিল।জ্ঞানী লোকেরা বলেছেন,
'আয় দ্বিগুণ হলে একজন মানুষ যতটা সুখী হয়, তার চেয়ে বেশি সুখী হয় সুন্দর মানসিক স্বাস্থ্য এবং একজন জীবনসঙ্গী পেলে।'
আমি যেন তার সন্ধানই পেয়েছিলাম।
আমি জানি আজ এই বসন্তে সে আসবে বসন্তকুমারী হয়ে। চারটি বছর পর খুব কাছে থেকে তার চুলের গন্ধ নিবো। দেখবো তার পাখির নীড়ের মতো দুটো চোখ। যে চোখ দেখাতে জানে ভালোবাসা।দেখাতে জানে স্বপ্ন।
মনে মনে প্রস্তুত হচ্ছিলাম তাকে কিভাবে প্রেমের প্রস্তাব দিব।
হঠাৎ পিছন থেকে শব্দ শুনলাম, স্যার।

চলবে...

মঙ্গলবার, ১৬ জানুয়ারী, ২০১৮

মানব জাতির অতীত বর্তমান ও ভবিষ্যৎ

-মাহ্দী কাবীর


"কত লক্ষ জনম ঘুরে ঘুরে আমরা পেয়েছি ভাই মানব জনম। এ জনম চলে গেলে আর পাবো না। না না না আর মিলবে না। তারে হৃদ মাঝারে রাখবো ছেড়ে দেবো না।

এই গানটি আমাদের সকলের কমবেশ জানা আছে। গানের কথা, সুর ও কন্ঠ দিয়েছিলেন ফকির লালন শাই। যিনি শুধুই মানুষ ও মনুষ্যত্বের গান গেয়েছিলেন। সেই মানব জীবন আমরা আজ কতটুকু ধরে রাখতে পারলাম? আদৌও পারবো কি যেটুকু আছে সেটাই ধরে রাখতে? কিছু সংখ্যক বিজ্ঞানী বলে গেছেন মানুষ নাকি অন্য প্রাণী থেকে বিবর্তিত। যদিও ধর্ম গ্রন্থ বলে থাকে অন্য কথা। যদি মানব জাতি অন্য প্রাণী থেকে বিবর্তিত না হয়েও থাকে, তবে এটা নিশ্চিত যে আসছে আগামী প্রজন্ম মানুষ থেকে অন্য প্রাণীতে বিবর্তিত না হোক, এক একটি যান্ত্রিক মানুষে রূপান্তরিত হবে যে তাতে আমার কোনো সন্দেহ নেই। আমাদের পূর্বপুরুষের কথায়ই বলি, তারা ছিল খুবই শক্তিশালী। তাদের নিবাস ছিল গুহা।পুরুষেরা করতো পশু শিকার আর নারীরা জন্ম দিয়েছিল কৃষি কাজ । তারা খাবারের তাগিদে ফসল ফলাতো। লজ্জাস্থান ডাকতো গাছের ছাল বা পাতা দিয়ে, ধীরেধীরে শিখলো কাপড় বানানো । শিখলো ঘর বানানো। ছেড়ে দিলো জঙ্গল, হয়ে উঠলো সভ্য। মনের ভাব প্রকাশ করতে তৈরী হল সাংস্কৃতিক ভাষা, তারপর অর্থবোধক ভাষা। তারপর লিখিত রূপ। মানুষে মানুষে তৈরী হল গভীর বন্ধন। সৃষ্টি হল সাহিত্য নামক অপার এক পৃথিবী যা পৃথিবীর অন্য কোনো পশু প্রাণীর মধ্যে পাওয়া যায় না। সব কিছু বিজ্ঞানেরই ফসল। আমাকে আপনাকে সবাইকে এইটুকু সত্য মানতেই হবে। কিন্তু বাংলায় একটা প্রবাদ আছে, 'অতি ভক্তি চোরের লক্ষণ ' বিজ্ঞান সেই আদিকাল থেকে মানুষের মস্তিষ্কে চেপে বসেছে। এখনো ঘাড় থেকে নামিনি। বিজ্ঞান মানুষকে দিয়েছে বেগ আর কেড়ে নিয়েছে আবেগ। আমাদের মানব জাতিতে বিজ্ঞান এমন ভাবে ভর করেছে তা ভাবাও যায় না। বিজ্ঞানের ব্যবহার চলছে প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে। শিক্ষাক্ষেত্রে বিজ্ঞান ইতিবাচক ও নেতিবাচক মিলিয়েই দখল করে রয়েছে। একজন অষ্টম শ্রেণির ছাত্র তার আছে ল্যাপটপ নামক যন্ত্র। যেখানে আছে লেখাপড়ার বিপুল ভাণ্ডার।আছে হাজার খানেক পিডিএফ কপি। আছে হাজার খানেক গেইমস। আর আছে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম। সারাদিন গেইমস নয়তো সামাজিক মাধ্যমে ভারচুয়াল যোগাযোগ রক্ষা চলছে তার নিত্যদিনের সঙ্গি। তাছারা এর বাহিরে আর কাজ থাকলে তো যাবে! তাদের ভোর হয় আটটা কি নয়টাই! আপনার প্রশ্ন জাগতে পারে তাহলে তারা কি ভোরের হাওয়া, পাখির কিচিরমিচির ও সূর্য উদয় উপভোগ করেনি কখনো? আরো একটু বাড়িয়ে বলবেন যে, প্রত্যুষ না দেখলে আমার দিনটাই মাটি! হ্যা তারা প্রতিদিনি ভোর দেখে, দেখে পাখির কিচিরমিচির, ভোরের রবিরশ্মি উপভোগ করে। তাদের সেই যন্ত্রের নাম হচ্ছে ভারচুয়াল রিয়েলিটি।
আপনার আশেপাশে কয়েক ডজন স্কুল পেয়ে যাবেন। কখনো একটা জিনিস কি লক্ষ্য করেছেন সেই স্কুলে খেলার মাঠ আছে কিনা? লক্ষ্য করেন নি। স্কুল- কলেজে যদি খেলার মাঠ না থাকে তাকে স্কুল বলা যেতে পারে আমি ভাবতেও পারিনা। কেননা একজন ছাত্র বড় হবে খেলাধুলো করে। সে তার বাসায়ও খেলার সুযোগ পাচ্ছে না স্কুলেও পাচ্ছে না। তাহলে সে পেলটা কী? তারপর সেই শিশু বাধ্য হয়েই ভারচুয়াল জগতে ঝুকে পড়বে। তখন সে ভারচুয়াল আর বাস্তবে তফাৎ করতে পারবে না। তখন সে তার আশেপাশের মানুষকে ভিন্ন চোখে দেখবে এটাই স্বাভাবিক। তার সাথে আশেপাশের লোক জনের আচরণ আর আশেপাশের লোকজনের কাছে তার আচরণে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবেই, তাতে দোষের দেখছিনা। লোপ পাবে তার ব্যক্তিত্ব বোধ! কারণ সে তো সারাক্ষণ টেবিলের ল্যাপটপের নিকটে বসা ছিল। সে মিশেনি কোনো বন্ধুদের সাথে, হ্যা সে মিশেছে ভারচুয়াল বন্ধুর সাথে। তাহলে আপনার কি মনে হয় না আমরা যান্ত্রিক মানুষ অর্থাৎ তথাকথিত রোবট হয়ে যাচ্ছি।

তারপর দেখুন এক সময় মানুষ জন্মাতো প্রাকৃতিক ভাবে। তারপর মানুষ জন্মাচ্ছে পেট কেটে, তারপর মানুষ জন্ম দিচ্ছে টেস্টটিউবে। যা কিনা একটা দম্পতী বা অন্য কোনো আত্মীয় হতে পারে বা সম্পর্ক নাও থাকতে পারে সেই মহিলার ডিম্বাণু ও পুরুষের শুক্রাণু বিজ্ঞানাগারে একত্র করে তৈরী করছে মানব সন্তান। সব কিছুও সুখের জন্য। হ্যা বিজ্ঞান মানুষকে দিয়েছে অনাবিল সুখ। কিন্তু আপনার মনে এই প্রশ্ন জাগেনি যে, বিজ্ঞান আমাদের থেকে কিছুই কি কেড়ে নিচ্ছে না? নিচ্ছে, তাহলে সেটা কি? মানব জীবন! মানুষ জীবন তো এমন হওয়ার কথা ছিল না। বিজ্ঞান মানুষ জীবনকে কেড়ে নিয়ে দিচ্ছি রোবট জীবন, দিচ্ছে যান্ত্রিক জীবন। কেননা মানব জীবন তো এমন হওয়ার কথা ছিল না। এখন বিজ্ঞানের লক্ষ্য শুধুই মস্তিষ্ককে শান্ত রাখা, মানে মস্তিষ্কের ক্ষুধা মিটানো। মস্তিষ্ক যদি শান্ত থাকে তাহলে আর কিছুই প্রয়োজন পড়ে না মানুষের। কেননা এই প্রসঙ্গে হিপোক্রেটাস বলেছেন "ব্রেইন থেকে, এবং শুধুমাত্র ব্রেইন থেকে-ই,উৎপত্তি আমাদের আনন্দ,উল্লাস,হাসি এবং কৌতুক, যেমন উৎপত্তি আমাদের দুঃখ,ব্যাথা-বেদনা, মনস্তাপ, অনুশোচনা এবং কান্না..." এখন ভাবুন যদি আমরা কৃত্রিমভাবে ব্রেইনকে খুশি রাখতে পারি তাহলে কিন্তু বাস্তবে আর করতে হবে না। আমাদের লাগবে না হাত কিছু ধরে অনুভব করার জন্য অর্থাৎ ফুল ধরে ফুলকে অনুভব করার প্রয়োজন নেই।, লাগবে না পা, হাঁটার জন্য। লাগবে না চোখ, দেখার জন্য। আমরা না খেয়েও মস্তিষ্ককে বুঝাতে পারবো খেয়েছি। আমরা জানি, কোনো কিছু দেখতে হলে চোখ প্রয়োজন। প্রথমেই বস্তুটির আলো চোখে পড়বে তারপর চোখ মস্তিষ্কে সিগনাল পাঠাবে তারপর মস্তিষ্ক বুঝবে যে এটা লাল রঙ অথবা কালো। সেই ভাবে হাত পা সবই মস্তিষ্কের কাছে সিগনাল পাঠায়। এখন মোদ্দা কথা হচ্ছে আমরা যদি সিগনালের অপেক্ষা না করে সরাসরি মস্তিষ্ক বুঝে নেই তাহলে আর হাত পা চোখ নাক কান কিছুরই প্রয়োজন পড়ে না আমাদের। ফুলের যেমন দরকার নেই গন্ধের জন্য, খাবারও দরকার নেই ক্ষুধার্ত পেটের জন্য। যদি দরকারও পড়ে আমাদের আছে আমাদের বানানো লোহ দিয়ে লোহ মানব। সে চাষাবাদ করে নিয়ে আসবে! তাহলে আমরা কি পেলাম? পেলাম পরিশ্রম ছাড়াই দেখার অনুভূতি, শুনার অনুভূতি। আমরা পেলাম সুখ। তাহলে আমরা মানব জীবন কি টিকিয়ে রাখতে পারলাম, নাকি বিবর্তিত হলাম যান্ত্রিক মানুষে? তাছাড়া বিশ্বের বেশ কিছু পরমাণু ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের তহবিলে মজুত আছে অনেক পরমাণু বোমা যা একটা দেশ, একটা জাতি ও একটা পৃথিবীকে ধ্বংস করার ক্ষমতা রাখে। আমরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কথা জানি, ১৯৪৫ সালের ৬ই আগস্ট সকালে
যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনী
জাপানের হিরোশিমা শহরের ওপর
লিটল বয় নামের নিউক্লীয় বোমা ফেলে এবং এর তিন দিন পর
নাগাসাকি শহরের ওপর ফ্যাট ম্যান নামের আরেকটি নিউক্লীয় বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।হিরোশিমাতে প্রায় ১৪০,০০০ লোক মারা যান। নাগাসাকিতে প্রায় ৭৪,০০০ লোক মারা যান এবং পরবর্তীতে এই দুই শহরে বোমার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় সৃষ্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান আরও ২১৪,০০০ জন। এখনো লেগে আছে ওই দুটি শহরে সেই বোমার কলঙ্কের চিহ্ন! পৃথিবীর কাছে কি দোষ করেছিল ভাবি প্রজন্ম। আজ তারা জন্ম হচ্ছে বিকলাঙ্গ হয়ে। তাহলে বিজ্ঞানকে আমরা ভরসা ও বিশ্বাস করে সেই অন্ধকার যুগ থেকে আধুনিক যুগ নামক ধ্বংস স্তবে নিয়ে এসেছি নয়কি? যে কোনো সময় মানুষ নামক রোবটের ভুলে ধ্বংস হবে মানব সভ্যতা, ধ্বংস হবে পৃথিবী।

কয়েক বছর আগে আমার এক ঢাকাইয়া কাজিন বেড়াতে এসেছিল আমাদের গ্রামের বাড়িতে। সে তো এসে রীতিমত কাহিল হয়ে গেছে। আমাকে বলেছিল তোরা বড়ই উদ্ভূত! এই ভাবে মানুষ বেঁচে থাকে কি ভাবেরে? আমি বলেছিলাম, মানুষ কি ভাবে বাঁচতে পারে আমার বোধহয় জানা নেই, আর তাও জানা নেই কোনটাকে বাঁচা বলে! সে বেশিদিন টিকতে পারেনি আমাদের গ্রামে। বড়জোর দুদিন রেখেছিলাম। যাবার সময় একটা চিরকুটে লিখে দিয়েছিলাম। চিরকুটে ছিল এই কয়েকটা লাইন
তুমি একটা শহুরে রোবট
আমি গ্রামের ভূত!
তোমার শহরটা বড়ই উদ্ভট
আমিও বেশ উদ্ভুত!

লেখক: কবি ও সাহিত্যিক।
পদার্থবিদ , ইকরা স্কুল এন্ড কলেজ। মো.নগর, বায়েজিদ, চট্টগ্রাম।
লেখকের ইমেইল : MahdiKaabir@gmail.com

শনিবার, ১৩ জানুয়ারী, ২০১৮

নৈঃশব্দ্যে শব্দচারী

-মাহ্দী কাবীর


এক

হয়তো তখন আমি তন্দ্রাচ্ছন্ন ছিলাম।তখন রাত দুটো কি তিনটে বাজবে বোধহয়।আকাশে হয়তো চন্দ্রকুমারী চন্দ্রিকা ও সপ্তর্ষিমন্ডলের সাতটি তারার গুচ্ছের সাথে ঈশানী ছোঁয়ে সারিবদ্ধভাবে তিনটে তারা মিটমিট করে জলছিল। জ্যোৎস্নাকুমারী জ্যোৎস্না অবিরামভাবে গগন ছেদ করে নিঃসৃত হচ্ছিল।তবে মাঝেমাঝে হইতো অকালজলদোদয়ে ভাটা পড়ছে চন্দ্রিকাময়ী রূপ যৌবন।তখন হয়তো চাঁদোয়া রজনীর বদলে বাসা বাঁধছে তমসালয়।মাঝেমাঝে ব্যাঙের ঘ্যানঘ্যান শব্দ হচ্ছিল। ঝিঝি পোকাগুলো ক্লান্ত হয়ে পড়েছে,তাই তারা নীরবে অবস্থান করছিল। কখনো মৃদু হাওয়া,কখনো ঝড়ো হাওয়া বাতায়ন দিয়ে আমার নিদ্রালয়ে প্রবেশ করছিল, আমি কিছুটা হলেও টের পাচ্ছিলাম।
হয়তো তখন আমি তন্দ্রাচ্ছন্ন ছিলাম। হঠাৎ অসম্ভাবিতরূপে আমি দেখলাম, একটি ঘুটঘুটে কালো হাত বাতায়ন দিয়ে আমার ঘুমালয়ে প্রবেশ করলো। তারপর সেই হাত আমার মোবাইল, বই, ক্যামেরা মুষ্টিবদ্ধ করছে।
হয়তো তখনও আমি তন্দ্রাচ্ছন্ন ছিলাম। আমার চক্ষু সম্মুখে ঘটছে,ঘটে চলছে। কিছুতেই কিছু করতে পারছি না।শুধুই বিছানাতে কাতরাচ্ছি। এবং বজ্রশব্দে শব্দ করতে চেষ্টা করছি। কিন্তু শব্দ যেন তখন জটিল বাঁধুনিতে বাঁধা পড়ে আছে। তাই বজ্রশব্দ নৈঃশব্দ্য হয়েই পরে রইলো তবু জাগতে পারলাম না।
তন্দ্রাচ্ছন্ন, নয় ঘুম,নয় সজাগ। বহুক্ষণ তন্দ্রাচ্ছন্ন ও সজাগের সঙ্গে লড়াই হলো আমার। বারবার যেন রবার্ট ব্রোসের মতো আমি হেরে চলছিলাম। অবশেষে সজাগ হলাম।
সজাগ হয়ে আমি নিজেই একটু অবাক হলাম। এক রহস্য আবিষ্কার করলাম।
আবিষ্কার করলাম নিজেকে, একটা মনোমুগ্ধকর বলতে সচরাচর আমরা যেই রাতকে বলে থাকি সেই রকমকে একটা রাতকে। রাত এতো সুন্দর হতে পারে, না জাগলে কখনোই বুঝতাম না।
ষোলকলায় পরিপূর্ণ চন্দ্র চন্দ্রিকাময়ী রূপ যৌবন অবিরামভাবে বিলি করছে অকৃপণ চিত্তে আমার ঘুমালয়ে।বাতায়ন পাশে সারিবদ্ধভাবে দেবদারু গাছ ছিল। ঝড়োহাওয়ায় বৃক্ষরাজির পত্র গুলি নৃত্য করছে।কিছুকালের জন্য হাওয়ার দল নীরবতা পালন করছে, এর সাথে বৃক্ষপত্র এবং তার নৃত্য । খানিক বাদে সে কি নৃত্য! এইভাবেই কখনো বাতাস একটু জিরায়, মেঘের আড়ালে লুকায় চাঁদ,জিরায় পাতায় পাতায় ঘর্ষণের শব্দ, জুনাকির আলো জ্বলে আর নিভে, কখনো ব্যাঙ, কখনো ঝিঝিপোকার দল ফরেস্ট মিউজিকে লিপ্ত হয় কখনো আবার গভীর ঘুমে চলে যায়। তখন রাতটি থাকে অনেক শান্ত, আবার শান্তময় রাত্রির বুক ছিঁড়ে শিয়াল কুকুরের চিৎকার।

দুই

তারপর কিছু দেবদারুর পাতা জোছনার চলার পথে রোধ সৃষ্টি করে বসেছিল এবং সে ছায়া আমার ঘুমালয়ে প্রবেশ করছিল। যেন সেই ছায়া রূপ ধরেছে বিভীষিকাময় জ্যান্ত কৃষ্ণ কায়া। সেই কায়া উন্মাদ নৃত্য করছে বাতাসের তালে তালে দেবদারুর পাতা। যেন এক জ্যান্ত মানবের ঘুটঘুটে কালো হাত আমার পড়ার টেবিলে ঘাটাঘাটি করছে কিছু একটা খোঁজছে হয়তো।খুব মজাই লাগলো বিষয়টা।
মানুষের মস্তিষ্ক সত্যিই ঘুমায় না।সব কিছু ঘুমিয়ে যায় কিন্তু মস্তিষ্কের ঘুম নেই। ঘুম নেই যেমন হৃদপিন্ডের আর রক্ত কণিকার।মানুষ যেটা বেশি ভাবে সেটাই ঘুমানোর পর স্বপ্নে হানা দেয়। কারণ মস্তিষ্কের তো ঘুম নেই। তাই সে মানুষকে ঘুমোতে দেয়না। তাছাড়া মস্তিষ্ক বাবু অবসর থাকার লোকও নয় বটে।হিপোক্রেটাস বলেছিলেন...
"ব্রেইন থেকে, এবং শুধুমাত্র ব্রেইন থেকে-ই,উৎপত্তি আমাদের আনন্দ,উল্লাস,হাসি এবং কৌতুক, যেমন উৎপত্তি আমাদের দুঃখ,ব্যাথা-বেদনা, মনস্তাপ, অনুশোচনা এবং কান্না..."
তাই এই রাতকে ভাগে পেয়ে মস্তিষ্ক তাকে ছাড়তে নারাজ।

তিন

যাক ভালোই হল, এই রাত্রিরে একটু হেঁটে আসলে মন্দ হবে না। তাই বের হয়ে পড়লাম হাঁটার জন্য। অবশ্য মস্তিষ্কবাবুকে ধন্যবাদ জানাতে হয়। সে যদি আমাকে এই রাতকে এই ভাবে মনের মধ্যে উপস্থাপন না করতো আমি কিন্তু এই রাতকে উপভোগ করতে পারতাম না। ভয় পেলেও ইন্টারেস্টিং ছিল পুরো বিষয়টা। ধন্যবাদ ব্রেইন।
এই রাতে হাঁটার লোভ কয় জন আর বল মিস করতে চায়।আমিও এর ব্যতিক্রম নই। আর যারা এই রাতের পরিবেশ, ওঙ্কার পছন্দ করে না,যার মনে ধরে না এই রাত্রির রূপ,তার ভিতরে মন আছে কিনা আমার সন্দেহ হয়। আমি আরো বলতে, 'পারি সে ভালোবাসা কী জানে না! 'হাঁটতে বের হয়ে পড়লাম। হাঁটছি তো হাটছি, কতক্ষণ হেঁটেছি খেয়ালে রাখিনি। মনে হচ্ছে কেউ পিছু নিয়েছে কারো অস্তিত্ব টের পাচ্ছিলাম।।হঠাৎ পিছন ফিরে দেখি একটি মানুষ! ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম সাড়ে তিনটে ছোঁয় ছোঁয়।এতো রাতে তো মানুষ হাঁটার কথা না। তাও আবার আমার পিছুপিছু...

এই, এই আপনি কে! আপনি কে?
আমার পিছু নিয়েছেন কেন?
-আ...মি! আমি খুনি!
মনে মনে ভাবলাম আমার সাথে মজা করছে। আবার জিজ্ঞেস করলাম, 'আমি আপনার পেশা কি জানতে চাইনি! জানতে চেয়েছি আপনার নাম কী!'
সে গম্ভীর গলায় বললো," এখন আর আমার তেমন কোনো নাম নেই, খুন করি যেহেতু খুনি বলেই ডাকতে পারিস!
আমি ভয়ে ভয়ে বললাম,'খু...খু.খুনি!'
কিন্তু আমি আরেকটি বিষয় দেখে সত্যিই ভয় পেয়েছি। তার কোনো ছায়া নেই। আমি বললাম,"
-এই জো... জো.. জো...ছনা রাতে আপনার ছায়া কোথায়?
আমার ছায়া! আমার ছায়াকে আমি ছুটি দিয়েছি।
কি বলছেন এসব পাগলের মত? মনে মনে ভাবলাম, 'মনে হয় সে আত্মহত্যা করেছে।'তাই তার প্রেতাত্মা মুক্তির জন্য ঘুরাফেরা করছে।' ভয়কে চেপে রেখে
একটু সাহস নিয়ে বললাম,'পরিষ্কার করে বলুন তো ।'
খুনি বললো,'গত রাতে আমি আমার ছায়াকে খুন করেছি!'
ছায়াকে খুন! মানে..!
বুঝলি নাতো বুঝবি না।কাছে আয় দেখাচ্ছি।আমি এসেছি তোর ছায়াকে মুক্তি দিতে।
ছায়া খুনি! ছায়া মুক্তি মানে কি!
কি বলছেন এসব! আমার পিছু ছাড়েন বলছি।
হ্যাঁ আমি তোর পিছু ছাড়তেই এসেছি,চিরতরে ছেড়ে দিব তোর পিছু।আয়, কাছে আয় বলে খুনি আমার গলা টিপে ধরলো। আমি তার হাত গলা থেকে ছাড়াতে হাত ছুটাছুটি করতেই আমার মোবাইল মাটিতে পড়ে চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে গেল।

চার

তখন হঠাৎ আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল। মোবাইল পড়ে আছে মেঝেতে। এতক্ষণ আমি স্বপ্ন দেখছিলাম । ঘুমের ঘোরে কখন যে বাহির থেকে বিছানায় এসে শুয়েছিলাম, তা আমার একদম খেয়ালে ছিল না। সারারাত এমনিতেই ঘুম হয় নি ওই কালো হাতের জন্য। সব দোষ এই জানালার। এখনি বন্ধ করে ঘুম দিচ্ছি এই ভয়ঙ্কর সুন্দর রাত আমার প্রয়োজন নেই, ওহ! যদি জানালা খোলা না থাকতো, এই হাতও চোখে ভাসতো না আর ভাবনায়ও এতো কিছু আসতো না। সব দোষ জানালার। দ্রুত বিছানা ছেড়ে টেবিলে গিয়ে এক গ্লাস পানি পান করলাম।মনিষীরা বলেছেন,
" ভয়কে জয় করতে হলে ভয়ের মুখামুখি হতে হবে, ভয় থেকে নিজেকে আড়াল করতে চাইলেই ভয় হানা দেয়।"
তখন ছিল গ্রীষ্মকাল। আজ রাতে একটু বেশিই গরম পড়েছে বটে। তার মধ্যে আবার ইলেক্ট্রিসিটি এই মফস্বল শহরে বড়ই ব্যাঘাত ঘটায়। সাত পাঁচ ভেবে আর জানালা বন্ধ করা হল না।
তাই জানালা বন্ধ না করে ঘুমাতে চেষ্টা করলাম আবার।
কিন্তু কিছুতেই ঘুম আসছে না।অবশেষে বোধহয় চোখ বুঝেছিলাম।
তখন কি আমি গভীর ঘুমে মগ্ন ছিলাম, না তন্দ্রাচ্ছন্ন ছিলাম, না সজাগ ছিলাম ঠাহর করতে পারছিলাম না।আবারও গল্পের পুনরাবৃত্তি, কিন্তু বাস্তব আর গল্পে তফাৎ করতে পারছি না।কেননা বাস্তব আমি তো জানি এই কালো হাত, হাত নয়, দেবদারু গাছের পাতার ছায়া রবির কিরণের মাঝে দোলাচ্ছে হাওয়ার দল। এখন আমার কাছে মনে হচ্ছে বাস্তব এটা না বাস্তব হচ্ছে এটাই যে, এটি একটি জ্যান্ত মানুষের হাত। কেননা এখন চোখ তো ' একটি জ্যান্ত হাত।' নিজের চোখকে তো অবিশ্বাস করা যায় না। হয়তো তখন শেষ রাত্রির শুকতারাটি জেগে উঠেছিল।হয়তো তখনও অকৃপণ চিত্তে জ্যোৎস্নাকুমারী জ্যোৎস্না বিলি করছিল।

পাঁচ

সেই কায়ার প্রেতবৎ রূপি কালো হাত। সে আমার প্রিয় ডায়েরিটি মুষ্টিবদ্ধ করছে।
আবার দেখলাম, সে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা উল্টাচ্ছে। কি যেন শন শন শব্দে পড়ছে, তা বুঝতে পারছিনে, হয়তো কোনো কবিতা হবে কেননা শন শন শব্দে একটা আবৃত্তি সুরও খোঁজে পাচ্ছিলাম। তবে কী পড়ছে তা বুঝে উঠতে পারছি না! আমি ভাবছি,
কোনো অতৃপ্ত পাঠকই হতে পারে।আজ হয়তো তাঁর কোনো পুস্তকই মন ভরে নাই। তাই এই রাত্রিরে রবিরশ্মিতে আমার কবিতা চুরি করে পড়ছে।
যাক পড়ুক গে, কিন্তু সে কে একটু জিজ্ঞেস করে দেখা যাক,আমি বললাম, 'কি?কে?কে তুমি?আমার ডায়েরী পড়ছো? আমার কবিতা পড়ছো?'
কিন্তু কোন সাড়া শব্দ পেলাম না।সে একের পর এক পৃষ্ঠা উল্টাচ্ছে আর নিভৃত চিত্তে পড়ে যাচ্ছে। তারপর আমি উচ্চঃ কন্ঠে চেঁচিয়ে বলতে চেষ্টা করলাম, কিন্তু আমার যেন মনে হচ্ছে আমি চন্দ্রের পৃষ্ঠে চেঁচাচ্ছি, তাই শূণ্য ডিসেবল শব্দ আমার থেকে উৎপন্ন হল না। না আরেক বার চেষ্টা করে দেখি।আমি বললাম, 'পাঠক সাহেব শুনছেন আমি আপনার সাথে একটু কথা বলতে চাই, তবে আপনি যদি কিছু মনে না করেন।' এবার হয়তো সে রাগ করেছে। পাঠক সাহেব তথা সেই প্রেতবৎ রূপি কালো হাত উচ্চশব্দে শন শন করে চলে যাচ্ছে,এবং এর সাথে আমার প্রিয় ডায়েরিটা নিয়ে যাচ্ছে।
আমি চিৎকার করে বললাম, 'কী ভাই ? দয়া করে আমার ডায়রী টা নিবেন না। আমার কবিতা নিবেন না, গল্প নিবেন না, প্লিজ।'
কিন্তু কে শুনে কার কথা। ধীরেধীরে সে অদৃশ্য হয়ে গেল।

ছয়

তারপর,তারপর হয়তো,
জ্যোৎস্নাকুমারী মেঘমল্লার অভ্যন্তরে ডুব দিয়েছিল।
অতঃপর হয়তো সারা বিশ্বে বিশেষ করে আমার ঘুমালয়ে আধারের সুযোগ পেয়ে প্রেতবৎ নাচছিল। হয়তো তখন উন্মাদ হাওয়া বইছিল। হয়তো খোলা জানালায় ভোরের বাতাসের মিছিল চলছিল।
তখন আমি কি করছিলাম তা বলতে পারবো না, হয়তো গভীর ঘুমে মুগ্ধ ছিলাম, নয়তো তন্দ্রাচ্ছন্ন..

আম্মার ডাকে ঘুম ভেঙ্গে গেল। অবশেষে সকাল হলো তাহলে। আম্মা এসে বললো, "কিরে কবীর, তোর ডায়েরী, বই, খাতা-কলম সব কিছু মাটিতে পড়েছিল কেন? তোকে রাত্রে কত করে বললাম প্রচণ্ড জোরে বাতাস বইছে জানালাটা বন্ধ করে ঘুমো, না তবুও জানালা খোলেই ঘুমাইলি। এখন হলো তো, খাতা-ডায়েরী সব কিছু মেঝেতে পড়েছিল।বিছানাতে শীতে কাতরাচ্ছিলি। দেখ বিছানাকে কি করেছিস! বিছানায় চেয়ে দেখলাম অনেক অগোছালো।
আমার কথা আর তোরা ভাইবোনের কারো কর্ণপাত হয় নাকি বাপু। নে ধর চা খেয়ে আমায় উদ্ধার কর, আমি গেলাম।আমি তখন আম্মার কথা গুলি একে একে ডুক গিলছিলাম।

শুক্রবার, ১২ জানুয়ারী, ২০১৮

এইটুকু ভালোবাসা

-মাহ্দী কাবীর

কোনো এক শীতে, আমি কুয়াশা হবো
সিক্ত নরম শীতল কুয়াশা
যার অন্তরালে, নীরব আড়ালে জমাট বাধবে তুমি, শিশির।
জমাট বেধে বেধে তোমাকে তুমি পাবে
আমার কুয়াশায় ঘেরা অন্তঃজালে
তুমি পাবে মুক্তোহার কিংবা এক গাল উষ্ণ আদর
আমি বলবো সুখে আছি পরিয়ে তোমায় শীতের চাদর।
অতঃপর দীর্ঘ এক রাত পেরিয়ে যখন হবে আমাদের মৃত্যু
এইটুকু অভিযোগ কিংবা আফসোস আমাদের রবে না।
.
চট্টগ্রাম | ১২.০১.২০১৮ইং

মঙ্গলবার, ৯ জানুয়ারী, ২০১৮

রাত্রির সীমানা

তোমার ওই চলার পথে জানি
একদিনও আমায় খুঁজবে না,
পথে পথে আমার অস্তিত্ব রবে
জানি সেটাও তুমি বুঝবে না।

জানি,
একদিন তুমি খুঁজবে!
কেন করতাম এতো জ্বালাতন?
এর মানে তুই বুঝবে...

তোর কাছে আমি যতটুকু ছিলাম দৃশ্যমান
ঠিক ততোটুকুই আজ রেখে গেলাম,
আর হ্যাঁ,আমি যতোটুকু ছিলাম অদৃশ্যমান
ততোটুকু নিয়েই আজ বিদায় হলাম।

শনিবার, ৬ জানুয়ারী, ২০১৮

তীর্থের কাক

-মাহ্দী কাবীর


চাঁদ যে কখন জ্বলে নিভে যায়, আশাহত কুয়াশার গহ্বরে
সুন্দরেরা আজ বড্ড নিরুপায়, বাস্তব জীবনের মোহে পরে।
ঝরে যায় ফুল আমের মুকুল, কুয়াশার বেষ্টনী বেধ করে
বাস্তবেরা যে বড্ড অসহায়, প্রকৃতির সাথে আজ জেদ করে।
তবুও যে হায় মৌমাছি যায়, কুয়াশায় পোড়া আমের মুকুলে
ধূলিকণায় মুড়ানো শৈশবে কুড়ানো, ঝরে যায় মিষ্টি বকুলে।
প্রকৃতির ওঙ্কার পৌছে না কর্ণধার থাকেনা মনোযোগের চোখে পরে
চাঁদ যে কখন জ্বলে নিভে যায়, আশাহত কুয়াশার মোহে পরে।
অতঃপর এক রাত্রিরে ঘটে যায়, মহা জীবনের পদস্খলন
শিশিরের শব্দে বইয়ে চলে যায়, একটি স্বপনের মহামিলন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া | ২৮.১২.২০১৭ইং



সবুজ বন্ধু

-মুহম্মদ কবীর সরকার

ছোট্ট মেয়ে মীম। কত কিছুই না তার জানার বাকি! বাবা,কখনো মা ও স্যারদের প্রশ্ন করে। দিন দিন যেন তার কৌতূহল বেড়েই চলছে!

মীম:স্যার মনে করেন পৃথিবীতে শুধুই একটা গাছ আছে,তাহলে পৃথিবীতে কোনো মানুষ বেঁচে কি?
স্যার : আছে তো?
মীম: কে স্যার?
স্যার: কেন, যে জানে একটা গাছ পৃথিবীতে আছে সে অর্থাৎ যে আমায় প্রশ্ন করে সে-ই মেয়ে, মীম তুমি!
মীম: তাহলে আর কেউ বেঁচে আছে কি?
স্যার: তুমি আমাকে জানিয়েছো গাছটা বেঁচে আছে, তাহলে আমিও তোমার কবীর স্যারও সাথে বেঁচে আছি।তাহলে হবে কি জানো, গাছ আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছে আর আমরা গাছকে বাঁচিয়ে রেখেছি। গাছের প্রয়োজনে আমরা বাঁচি, আমাদের প্রয়োজনে গাছ বাঁচে।

তখন ক্লাসের সকল ছাত্র-ছাত্রী হাসাহাসির উৎসবে মেতে উঠলো কিন্তু মীম হাসিনি মীম ভাবছে,' হয়তো একটা গাছ থাকলে কোনো মানুষও বাচঁতে হবে অথবা কোনো প্রাণী ।' মীম স্যারকে আবারও প্রশ্ন করলো,স্যার কিভাবে?
স্যার :মীম দেখ, আমরা যদিও গাছের ওপর খাবারের জন্য সরাসরি অর্থাৎ প্রত্যক্ষভাবে নির্ভরশীল ঠিক সে-ই রকম গাছ ও আমাদের ওপর সরাসরি না হোক পরোক্ষভাবে নির্ভরশীল। যা আমরা চোখে দেখিনা। আমাদের বেঁচে থাকতে গেলে যেমন,ফল,সবজি ও অক্সিজেন দরকার তেমনি গাছের বেঁচে থাকার জন্য কার্বন ডাই অক্সাইড দরকার। যা মানুষের প্রশ্বাসে বের হয়ে আসে। আর তুমি যেহেতু জানোই একটা বেঁচে আছে তাহলে তুমিও বেঁচে আছো। আজ এখানেই ছুটি...

আজ মীমের জন্মদিন। বাবা মীমকে উপহার দিল একটি পেয়ারা গাছের চারা।মীম অনেক খুশি হল। তার সখ গাছ লাগানো।তার একটা বাগান আছে।সেখানে নানা প্রজাতির গাছ আছে।
মীম আব্বুকে জিজ্ঞেস করলো,'তুমি আমার জন্মদিনে গাছ উপহার দাও কেন?'
বাবা বললো,'তুমি তো জানো গাছ আমাদের অক্সিজেন(O2) দেয়।আর অক্সিজেন হল মানুষের জীবন বাঁচানোর প্রথম ও প্রধান উপাদান। খাদ্যও বলতে পারো। যেমন আমরা খাবার খাই সেই রকম-ই, তুমি একদিন ভাত না খেয়ে অন্য কিছু যেমন কলা, আপেল খেয়ে থাকতে পারো কিন্তু কিছুক্ষণের জন্য অক্সিজেন ছাড়া থাকতে পারবে না।এর বিকল্পও কিছু নেই। নাক,মুখ চেপে ধর দেখ,বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারবে না।অক্সিজেন আমাদের শ্বাসের সাথে ভিতরে গিয়ে রক্তচলাচলে সহযোগিতা করে। গাছ থেকে যদি আমরা অক্সিজেন না পেতাম তাহলে বেঁচে থাকতে পারতাম না। আর আমি চাই প্রতি জন্মদিনে তুমি নিজ হাতে একটি করে গাছ লাগাও।তাতে করে কি হবে জানো?
-কী হবে আব্বু?
তাতে ধরে নিবে তুমি নিজ হাতে গাছ লাগিয়ে নিজের প্রয়োজনীয় অক্সিজেন নিজেই যোগান দিচ্ছো।
তাছাড়া প্রতিটি দেশে চারভাগের এক ভাগ অর্থাৎ ২৫% গাছ থাকা দরকার।আমাদের কিন্তু নেই!মানুষ গাছ কেটে কেটে ঘরবাড়ি বানাচ্ছে।

তারপর মীম তার আব্বুর সহযোগিতায় বাগানে পেয়ারার চারাটি লাগালো।
মীম জানে গাছকে নিয়মিত পানি দিতে হয়, আগাছা পরিষ্কার করতে হয়। মীম তাই-ই করতে লাগলো। অবসর সময় পেলে-ই গাছ আর মীম। যেন গাছ তার বন্ধু হয়ে গেল।

অবসরের এক দুপুরবেলায় মীম গেল পেয়ারা গাছে পানি দিতে।
গাছ বললো, 'মীম আমাকে একটু সাহায্য করবা?'
মীম :কী সাহায্য বন্ধু?
গাছ:ইদানীং আমি খাবার তৈরী করতে পারছি না।
মীম: খাবার তৈরী মানে? তোমাদের খাবার তো শুধুই পানি।যা আমি প্রতিদিনি দিচ্ছি। আর কবীর স্যার বলেছিল কার্বন ডাইঅক্সাইডও নাকি খাও।
গাছ: শুধুই পানি-ই আর কার্বন ডাইঅক্সাইড না।আমরা আরো অনেক কিছু-ই খাই! আর আমরা নিজেদের খাবার নিজেরাই তৈরী করি।আমরা তোমাদের ওপর নির্ভরশীল না,বরং তোমরা আমাদের ওপর নির্ভরশীল।যেমন আপেল,কলা, শাক সবজি সব আমাদের দান।
মীম: মিথ্যে বকোনা তো। আমি প্রতিদিন পানি দেয়, আর তুমি বলছো আমি তোমার ওপর নির্ভরশীল?
গাছ : পানি কি তুমি বানিয়ে দাও? আর তোমাদের খাবার তো আমরা উৎপাদন করি! তোমাদের অপ্রয়োজনীয় পানি টুকু আমাদের দিলে-ই চলে।
মীম: তোমার সাথে কথা বলে পারবো না বাপু। আর হ্যা কি জানি সাহায্য চাচ্ছিলে।তাছাড়া তোমরা পানি ছাড়া আর কি খাও?
গাছ: বলছি বাপু বলছি! আমরা পানি ছাড়া সূর্যের আলো ও কার্বন ডাই অক্সাইড খাই। পানি, সূর্যের আলো ও কার্বন ডাইঅক্সাইড(CO2) দিয়ে খাবার তৈরী করি, যাকে বলে সালোকসংশ্লেষন।
মীমঃ কার্বন ডাইঅক্সাইড কী গো চিনলাম না তো?
গাছ: তোমরা যেটা গ্রহণ কর মানে শ্বাস নাও সেটা হচ্ছে অক্সিজেন।আর যে গরম গ্যাসটা বর্জন কর সেটা-ই হচ্ছে কার্বন ডাইঅক্সাইড। যা আমাদের খাদ্য।
মীম: এই তুমি বললে একটু আগে তোমরা আমাদের ওপর নির্ভরশীল নয়, এই তো আমাদের থেকে কার্বন ডাইঅক্সাইড ঠিকি নিচ্ছো।
গাছ : আমরা যদি কার্বন ডাইঅক্সাইড না গ্রহন করতাম তাহলে তো তোমাদের-ই ক্ষতি হত। বাতাসে কার্বন ডাইঅক্সাইড বেড়ে যেতো অক্সিজেনের অভাবে মারা যেতে।
মীম: আচ্ছা, বল কী সাহায্য করবো?
গাছ: আমার ওপর সূর্যের আলো পড়ছে না বেশ কিছুদিন ধরে, তুমি যদি ওপরের ঢালটা কেটে দিতে?
মীম: কই! তোমার ওপরে তো রোদ লাগে?
গাছ: ওপরে লাগে পাতায় লাগে না। আমার পিঠ পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে কিন্তু তা কোনো কাজে আসে না যদি পাতায় না পড়ে। আমরা সূর্যের আলো খাই অর্থাৎ শোষণ করি গাছের সবুজ পাতা দিয়ে। যাতে থাকে ক্লোরোফিল।ক্লোরোফিল নামক রঞ্জক আলোকশক্তিকে রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরিত করে এবং তা উৎপন্ন শর্করাজাতীয় খাদ্যের মধ্যে স্থিতিশক্তি রূপে জমা রাখি। ক্লোরোফিল সবুজ পাতায় আছে। গাছের ছালে বা মূলে নেই।
ছয় অনু কার্বন ডাইঅক্সাইড(6CO 2)
বারো অনু পানি(12H 2 O)
ও সূর্যের তাপ একসাথে মিলে বিক্রিয়া করে গ্লুকোজ( C 6H 12 O 6)
এর সাথে ছয় অনু পানি ও কার্বন ডাই অক্সাইড অনু সমান অক্সিজেন উৎপন্ন করি।
মীম জানো আমরা যতটুকু কার্বন ডাইঅক্সাইড তোমাদের থেকে গ্রহন করি ঠিক ততটুকু অক্সিজেন ত্যাগ করি।
মীম :আজ জানলাম, আর আমরা তো জানতাম, গ্লুকোজ মানেই একপ্রকার মিষ্টি জাতীয় কিছু?আজ জানলাম সেটা তোমরাই উৎপন্ন করো।
গাছ: হ্যা আমরা-ই, প্রতিটি মিষ্টি ফলে গ্লুকোজ থাকে।
মীম: তুমি আমাদের জন্য এত কিছু উৎপাদন করো!
আমি আব্বুকে বলবো ওই গাছের ঢাল টা কেটে দিতে এখন আসি বন্ধু।

এখন মীম বড় ক্লাসে উঠেছে তাই গাছকে সেই রকম গাছের সাথে গল্প জমে উঠেনা, পড়াশোনায় ব্যস্ত। তবুও একবার হলেও এসে দেখে যায়।

মীম স্কুলে যাবে এমতাবস্থায় গাছ ডেকে বললো,' মীম কিগো! সেই সকাল থেকে বসে আছি তোমার সাথে গল্প করবো বলে,আর তুমি স্কুল,প্রাইভেট। আমাকে সময়-ই দিচ্ছো না।
মীম: তুমিও চলে আসো আমার সাথে স্কুলে, বেশ মজা হবে তাইনা? তাছাড়া তোমার গল্প গুলি বড্ড অচেনা ও অজানা হয় গো।
গাছ : বা....ড়ে, আমার যে তোমার মত দুটো পা নেই।শুধুই একটা পা। তাও আবার মাটির নিচে লেগে আছে। আর অজানাকেই তো শুনেছি মানুষ জানতে চাই।তুমি জানতে চাও না?
মীম:চাই তো!তোমার ভাষা কঠিন কিনা!আচ্ছা বাপু, বিকেলবেলায় শুনবো। আমার যে বড্ড দেরী হয়ে যাচ্ছে গো। এখন আসি...।
গাছ: যাও, যাও বিকেল করে আসিও কিন্তু...
বিকেলে মীম আসলো...
গাছ: জানো, আজ সকালে আমাতে মুকুল(ফুলের কলি) এসেছে। বেশ কিছু ফুটেছিলও। জানো সে জন্য মৌমাছি ও প্রজাপতিরা এসে গল্প করে গেছে।
মীম : তাই-ই নাকি! আমরা জানি মৌমাছি মধু খায়, তুমি বলছো গল্প করে করে গেছে।
গাছ: হ্যা ঠিক বলেছো। তবে শুধু মধু-ই খায়না।তারা আমাদের ফুলকে ফলে পরিণত করতে সাহায্য করে।
মীম : দারুণ তথ্য দিচ্ছো বন্ধু। ধন্যবাদ বন্ধু।
গাছ: শুনুইনা।আর তোমরা শুধুই ধন্যবাদ দিতে জানো আর কিছুই পার না। আমাদের ফুলে পরাগরেণু ও পরাগধানি থাকে। যখন মৌমাছিরা মধু খায় তখন তারা পরাগধানী থেকে পরাগরেণু গর্ভমুণ্ডে নিয়ে যায়,তাই ফুল থেকে আমাদের ফল হয়।
মীম: তাহলে কালকে মৌমাছি ও প্রজাপতি আসলে আমার তরফ থেকে সালাম জানিও বন্ধু।
গাছ: আচ্ছা জানাবো বন্ধু।

তারপর মীম আর গাছের মধ্যে কত কথোপকথন যে হল। ফুল থেকে ফল হল। এই ভাবে-ই চলে গেল বেশ কিছুদিন।

তারপর একদিন বিকেলে...
জানো মীম আজ এক ক্ষুধার্ত পাখিকে লাল পাকা পেয়ারাটা দিয়ে দিয়েছি। তুমি রাগ করো নি তো?
মীম: রাগ করবো কেন? তোমার ফল তুমি যাকে খুশি তাকেই দিতে পারো।
গাছ : তুমি তো বলেছিলে নিবে।যাজ্ঞে,জানো পাখিটির কষ্টের কথা শুনে আমিও না করতে পারি নি । সে নাকি দক্ষিণের জঙ্গল থেকে এসেছে। অনেক ক্ষুধার্ত ছিল। সে-ই জঙ্গলে নাকি কিছু দুষ্টু লোক আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। সেখানে পাখিটির দুটো ছানা ও তার স্ত্রী ছিল। তাদের সন্ধান আর সে পাইনি।দুষ্টু লোকেরা অনেক গাছ পুড়িয়ে ফেলেছে।
মীম: তাহলে আব্বু যে বললো প্রতিটি দেশে ২৫ভাগ বন থাকা প্রয়োজন। আমাদের ২৫ ভাগ থেকে ১৭ ভাগ আছে।এর মধ্যে আবার বন ধ্বংস!
গাছ: হ্যা মীম, বাতাসে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যাবে। বাতাস মানুষের জন্য অনুপযুক্ত হয়ে যাচ্ছে। এতে করে মানুষের মাঝে নতুন নতুন রোগ জন্ম নিচ্ছে।
মীম: তাহলে আমরা কী করবো বন্ধু?
গাছ: বেশি বেশি গাছ লাগাতে হবে, বন ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। মানুষকে বুঝাতে হবে গাছের উপকারের কথা। একটা গাছ কাটলে দুটো গাছ লাগাতে হবে।
মীম: আচ্ছা বন্ধু তাই হবে।

তারপর একবছর চলে গেল...
বাবা বাজার থেকে পেয়ারা কিনে আনলো। মীম পেয়ারা দেখে চোখের জল ধরে রাখতো পারলো না। মীমের মনে পড়ে গেল গাছ বন্ধুর কথা। গাছ বলেছিল, 'বন্ধু, তুমি এই পেয়ারাটা খাও,
যাতে আছে ভিটামিন সি। চারটা কমলায় যতটুকু ভিটামিন পাওয়া যায় ঠিক ততটুকু একটা পেয়ারায় পাওয়া যায়।আর ভিটামিন সি শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি করে শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। তাছাড়া যে কোন ইনফেকশন থেকে পেয়ারা শরীরকে সুস্থ রাখে।' মনে পড়ে গেল সেই স্বজন হারানো পাখিটির কথা।আজ সে-ই পাখিটির মত মীমও তার প্রিয় বন্ধুকে খুঁজে ফিরে আজও।
একদিন বাবা বিল্ডিং তুলবে বলে তার প্রিয় বন্ধুকে হত্যা করলো। কতবার যে বারং করেছিল মীম।তার কথা কেউ শুনেনি।
বাবা এসে মীমকে বললো, 'মীম কাঁদছ কেন? তোমার কি গাছবন্ধুর কথা মনে পড়েছে?'

পদার্থ বিজ্ঞান ডিপার্টমেন্ট,
সরকারী সিটি কলেজ,চট্টগ্রাম

শুক্রবার, ৫ জানুয়ারী, ২০১৮

কিছু ইসলামিক পত্রিকার ইমেইল

বর্তমান সময়ের
কিছু ইসলামী পত্রিকার ইমেইল
মাসিক আলকাউসার
info@alkawsar.com
মাসিক মদিনা
monthlymadina@gmail.com
মাসিক নেয়ামত
manthlyniamat@gmail.com
মাসিক মুঈনুল ইসলাম
editor.m.islam@gmail.com
মাসিক রাহমানী পয়গাম
rpaigam@yahoo.com
মাসিক আদর্শ নারী
monthlynari@gmail.com
মাসিক আন-নাবা
annaba786@gmail.com
মাসিক আল-জান্নাত
aljannat28@gmail.com
মাসিক আল কারিম
masikalkarim@gmail.com
মাসিক ইসলামি পয়গাম
islamipaigam@gmail.com
মাসিক নকীব
masiknakeeb@gmail.com
মাসিক কিশোরপথ
kishorpath@gmail.com
মাসিক ইসলামী বার্তা
Islami Barta
monthlyislamibarta@gmail.com
মাসিক ফুলের হাসি
fulerhashibd@yahoo.com
মাসিক নবডাক
monthlynabodak@yahoo.com
প্রতিভা
uhkhan1990@gmail.com
কপি করে রাখুন, কাজে লাগতে পারে।

azadi@dainikazadi.net(বুধবার)


ভাষণ

অদ্ভুত দৃশ্যপট-
ছাত্রদের রাজনীতি
প্রতিবছর হয় স্মৃতি
ভাংচুর ধর্মঘট!
.
জয় হোক ছাত্রদের। পতন হোক ছাত্রদের মুখোশ পড়া সন্ত্রাসীদের।যারা ছাত্রদল ও ছাত্রলীগে নাম লেখা-ই শুধুই মাত্র ক্ষমতার লোভে পড়ে। যারা নিজের সুখের মুখে পড়ে কেড়ে নেই অন্যের সুখ। যার দরুনে ভুক্তে বাংলার সকল স্তরের মানুষকে, বিশেষ করে শ্রমজীবী দিনমজুর ভাইয়দের। তারা দেশের বন্ধু হতে পারে না।তারা দেশের চরম শত্রু।ছাত্রলীগের  সত্তরতম জন্মদিনের পরেও আমরা কি পাবো না বঙ্গবন্ধুর মত ছাত্রনেতাকে। যারা দেশেরটানে, মানুষের টানে ক্ষণেক্ষণে ছুটে যাবে রাজপথে।  ছাত্রলীগের জন্ম দিনে আমাদের প্রত্যাশা দেশ প্রেমিক ছাত্রলীগ। যারা দেশের কল্যাণে কাজ করবে।কোনো ক্ষমতার মোহে পড়ে নয়। যারা দেখবে দেশের স্বার্থ, নিজের স্বার্থ নয়।যারা সত্যিই ভালোবাসবে এই দেশটাকে। আসুন আমরা দেশকে ভালোবাসি, দেশের কল্যাণে এগিয়ে আসি।
ছাত্র মোরা লক্ষ্য মোদের
সুন্দর দেশ গড়ার
অন্যায় আর অত্যাচারীদের
একদম শেষ করার।
→ভাষণে- মাহ্দী কাবীরসরকারী সিটি কলেজ,চট্টগ্রাম

বুধবার, ৩ জানুয়ারী, ২০১৮

আর কত লজ্জা!

আর কত লজ্জা পেলে তাকে লজ্জা বলে ইসরাইল?
আর কতো লজ্জা!
যখন তোর ঔরস জাতক তোকে বলে পতিতা
তোকে শুধুই রিফিউজি-ই বলে ক্ষান্ত হয় না, বলে অত্যাচারী খুনি
বলে অন্যের ভূমি দখলদার। আর তারা যখন মুখে প্রচণ্ড ঘৃণা নিয়ে বলে,
'আমি তোর অত্যাচারী মোসাদ ও সেনাবাহিনীর সদস্য হতে চাই না।'
আর কত লজ্জা পেলে ' লজ্জা' হয় ইসরাইল
আর কত লজ্জা!

আর কত লজ্জা পেলে লজ্জায় পড়ে আমেরিকা?
আর কত লজ্জা!
যখন ছিঃ ছিঃ করে সারা বিশ্ব, করে দেয় তোদের এক ঘরে।
তোদের দেওয়া আগুনে যখন ভস্ম হয় বিশ্ব
যখন লক্ষ লক্ষ নারী সতীত্ব হারিয়ে হয় নিঃস্ব।
যখন লক্ষ শিশু আপনজন হারিয়ে ঘুরে সভ্যতার তলানিতে।
তখন তোরা মজা করেই অসভ্য বলিস তাদের!
তখন কি তোরা সম্মান বোধ করিস, এই অস্ত্র নিয়ে!
কখন তোদের লজ্জা হবে আমেরিকা,কখন?

আর কত লজ্জা দিলে লজ্জিত বোধ করবি মায়ানমার?
আর কত লজ্জা!
যখন শান্তির তকমা পেয়ে অশান্তির যজ্ঞ চালাস
যখন লক্ষ নারীকে বিধবা করে ক্ষুধার্ত শুঁকুনের মত ঝাঁপিয়া পড়িস তাদের স্তনে
যেখানে একদিন তোর মা ও শান্ত করেছিল স্তনে মুখ গুঁজে।
কিভাবে নিজের মাকে তখন ভুলে যাস মায়ানমার, কিভাবে?
কখন, কখন তোদের লজ্জা হবে মায়ানমার ?
যখন বিশ্ব এক গাল থুথু ফেলে শান্তির তকমা কেড়ে নেওয়ার দাবি তুলে।
আর কত লজ্জা দিলে তাকে লজ্জা বলে।

আর কত লজ্জা চাস ভারত
আর কত লজ্জা!
যখন ধর্মের দোহাই দিয়ে অন্যের মসজিদ ভাঙ্গিস
যখন মুসলিম বিদ্বেষ ছড়াস ক্ষমতার লোভে
লাভ জিহাদ নামে মারিস নিরীহ দিনমজুরকে নিষ্ঠুর ক্ষোভে
তখন কি তোদের বুক গর্বে প্রশস্ত হয়?
নাকি মনে মনে লজ্জা বোধ করিস ভারত?
আর কত লজ্জা পেলে ক্ষান্ত হবি পৃথিবী
আর কত লজ্জা!

.
আর কত লজ্জা! | মাহ্দী কাবীর
ব্রাহ্মণবাড়িয়া | ০১.০১.২০১৮ ইং