
এক
তোমার খোঁপার ফুলটা দিলেএখন আমার ভালো লাগে কালো কাক। অবাক হয়ে দেখি তার শরীর। দেখি তার স্নান সেরে আসা ভেজা পালক। কতই না সুন্দর কারুকাজে খুচিত তার শরীর! একজন প্রেমিকই সেই রূপ উপভোগ করার অধিকার রাখে। আপনারা হয়তো ভাবছেন আমি প্রেমে পড়েছি কি না? হ্যা, আমি প্রেমে পড়েছি। প্রেমে পড়েছি এক কালো মেয়ের। আপনারা হয়তো উপহাসের সহিত বলাবলি করছেন, কালো মেয়ের প্রেমে পড়ে নাকি কেউ! তাহলে বলি শুনুন, আপনারা কৃষ্ণচূড়া ফুল দেখেছেন কখনো? পড়েছেন তার রক্তিম রূপের প্রেমে? নাকি দৃষ্টিশক্তি লোপ পেয়েছিল তার তীব্র রূপের আলোকছটা চোখে পড়তেই? তার টকটকে লাল রঙ দিয়ে কাছের দূরের সকল প্রেমিকদের আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়। আপনি কি তাহলে কৃষ্ণ নাম আছে বলেই কৃষ্ণচূড়ার কাছে যাননি? গেয়েছিলেন তো! ওই ফুলের নাম কৃষ্ণচূড়া সত্ত্বেও গিয়েছিলেন, কারণ আপনি জানেন সেই ফুল আদৌ কৃষ্ণ-টৃষ্ণ না। কিন্তু আপনি কালো মেয়ের কালো রূপ দেখতে পাননি, তাই তার ধারেকাছেও জাননি। রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল দেখেছিলেন কালো মেয়ের রূপ। তাই রবীন্দ্রনাথ গেয়েগেছেন_
বল না, এমন কি হয় ক্ষতি?
সারাজীবন ভালো গো বাসবো
দিলাম বন্ধু প্রতিশ্রুতি!
কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি, কালো তারে বলে গাঁয়ের লোক।আর নজরুল গেয়েছিলেন-
মেঘলা দিনে দেখেছিলেম মাঠে কালো মেঘের কালো হরিণ-চোখ।
কালো মেয়ের পায়ের তলায় দেখে যা আলোর নাচন।এখন আমি বসে আছি তীর্থেরকাকের মত তার অপেক্ষায়!আজ আমাদের দেখা করার কথা।আমাদের প্রেমের চার বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে। যদিও আজকেই তাকে আমি প্রপোজ করবো। তাহলে আবার প্রেমের চার বছর হয় কিভাবে? আপনাদের মনে এইটুকু প্রশ্নের আবির্ভাব হতেই পারে। এই প্রশ্নের উত্তর পেতে যে আপনাকে আমার মতো তার অপেক্ষা করতে হবে।
(তার) রূপ দেখে দেয় বুক পেতে শিব যার হাতে মরণ বাঁচন।
তাকে যদিও প্রতিদিনি দেখি তবে এইভাবে এই প্রথম দেখা হচ্ছে আমাদের। সাথে নিয়ে এলাম তেরোটি লাল গোলাপ । তেরোটি গোলাপ এনেছি কেন বুঝলেন না তো? আপনার বুঝার দরকার নেই! সে এসেই বুঝে নিবে! আমি ভালোবাসা কি বুঝতাম না। সেই আমায় শিখিয়েছে ভালোবাসা কি। ওহ দুঃখিত! তার নামই তো বলা হল না। তার নাম মীম। অবশ্য নামটা আমার দেওয়া। মীম নামটা আমার অনেক প্রিয়। নামের অর্থই 'ভালোবাসা' কিনা তাই বোধহয়! সে এখনো জানে না তাকে যে মীম নামে ডাকবো!
দুই
মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে আমি। বড় হয়েছি গ্রামে। পড়াশুনার সুবাদে চট্টগ্রাম আসা। চট্টগ্রাম এসে অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে আমাকে। পড়াশোনার খরচ, থাকা খাওয়ার খরচ নিয়ে। কখনো কোচিং, কখনো প্রাইভেট টিউটশনি করে আমাকে এই শহরে টিকে থাকতে হয়েছে। তখন আমার কাছে প্রেম ছিল নিছক মরীচিকার মতো। একে একে এই শহরের বুকে কেটে গিয়েছিল অনেকগুলি বছর। যেমন ঝরে যায় শীতের ঝরা পাতার মতো ফুলহীন বসন্ত। তখন সালটা ছিলো ২০০৮।একদিন মীম আসলো বসন্ত নিয়ে আমার জীবনে।
বেশ কিছু ছাত্র ছাত্রী পড়তে আসতো তখন।মীম ছিল তাদের মধ্যে একজন। মীমের চুল ছিল বেশ লম্বা, চুলের অগ্র নিবাস ছিল কটিদেশে। এই ঘন লম্বা কেশের প্রেমে পড়েই বোধহয় জীবনানন্দ লেখেছিলেন,
চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা,প্রতিদিন বড় খোঁপায় গেঁথে আসতো পীচ ফুল। সবার শেষে বের হত কোচিং থেকে। তখন তার খোঁপা খোলে ফুল আমার বেঞ্চে রেখে চলে যেত। আমি কখনো সেসব খেয়ালে নেইনি।
মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য; অতিদূর সমুদ্রের ’পর
হাল ভেঙে যে-নাবিক হারায়েছে দিশা।

'আয় দ্বিগুণ হলে একজন মানুষ যতটা সুখী হয়, তার চেয়ে বেশি সুখী হয় সুন্দর মানসিক স্বাস্থ্য এবং একজন জীবনসঙ্গী পেলে।'আমি যেন তার সন্ধানই পেয়েছিলাম।
আমি জানি আজ এই বসন্তে সে আসবে বসন্তকুমারী হয়ে। চারটি বছর পর খুব কাছে থেকে তার চুলের গন্ধ নিবো। দেখবো তার পাখির নীড়ের মতো দুটো চোখ। যে চোখ দেখাতে জানে ভালোবাসা।দেখাতে জানে স্বপ্ন।
মনে মনে প্রস্তুত হচ্ছিলাম তাকে কিভাবে প্রেমের প্রস্তাব দিব।
হঠাৎ পিছন থেকে শব্দ শুনলাম, স্যার।
চলবে...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন