মঙ্গলবার, ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

একুশে ফেব্রুআরি

-মুহম্মদ কবীর সরকার


কোকিল যখন ডেকেছিল তাহার আপন সুরে
বাংলা যখন সেজেছিল ফাগুনের এক ভোরে।
সবুজ পাতার খোঁপা জুড়ে ফোটলো যখন ফুল
তখনি ভাই ছুটে এলো পাক ঘাতকের দল।
ফুল পাখিকে বারণ করে, ফোটতে তাদের দেয়না
আপন গন্ধে আপন সুরে, বইতে তাদের দেয়না।
তা কি ভাই হয় বল, তা কি ভাই হয়?
পাখির ভাষায় ফুলের ভাষায় আপন কথা কয়।
তাই, আপন ভাষা মায়ের ভাষা, প্রাণের ভাষার সুখ পেতে
সহস্রাধিক মুক্তি পাগল দিয়েছিল বুক পেতে।
সালাম শফিক জব্বার রফিক আরো শত ফুলের নাম
কৃষ্ণচূড়ায় লিখেছিল রক্ত দিয়ে তাদের নাম।
কৃষ্ণচূড়া লাল যে আছে রক্ত লেগে আজও তারি
মায়ের ভাষা ভালোবেসে আজও ছুটে প্রভাত ফেরি
আমার ভাই'য়ের রক্তে রাঙানো
একুশে ফেব্রুয়ারি,
আমি কি ভুলিতে পারি ও ভাই
আমি কি ভুলিতে পারি?
.
১৩.০২.২০১৮ | চট্টগ্রাম

রবিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

ছড়ামর্শ

- মুহম্মদ কবীর সরকার


বই: ছড়ামর্শ
লেখক: জনি হোসেন কাব্য
প্রকাশনী : দাঁড়িকমা প্রকাশনী
ছড়ামর্শ হলো ছড়া লেখার পরামর্শ।ছড়াকার জনি হোসেন কাব্যের অনবদ্য শব্দ বুনন 'ছড়ামর্শ'। আসলেই যারা প্রকৃত সাহিত্যিক তাদের দ্বারাই সৃজনী শব্দে সৃজনীশক্তিতে বাংলা সাহিত্য হয় আরো সুন্দর আরো রুচিশীল। প্রবন্ধকার ছড়া ও পরামর্শ মিশ্রণ করে এমন একটি নতুন শব্দ তৈরী করেছেন যা সাহিত্যপ্রেমী নবীন কিংবা প্রবীণ পাঠক ও লেখক একবার হলেও এই প্রবন্ধগ্রন্থে চোখ বুলিয়ে নিবে। এবার আসি ছড়ামর্শের ভেতরকার পরামর্শের কথা। আমরা ইতিপূর্বে কবিতার ছন্দ নিয়ে বিভিন্ন প্রবন্ধ গ্রন্থ পড়েছি যেমন কবিতার ক্লাস- নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী , কবিতার কথা- জীবনানন্দ দাশ ইত্যাদি ওই সব গ্রন্থে ছন্দের বিভিন্ন শাখা নিয়ে আলোচনা করেছেন খুব সুন্দরভাবেই কিন্তু শুধুই ছড়া নিয়ে বাংলা সাহিত্য কম সংখ্যক প্রবন্ধ'ই আছে। ছড়া নিয়ে বিষাদভাবে আলোচনা করেছেন প্রবন্ধকার জনি হোসেন কাব্য। ছড়ামর্শে আপনারা যা পাবেন তার কিছু অংশ তুলে ধরলাম
১. ছড়া লেখার নিয়ম কানুন:
কবিতা আর ছড়া এক নই কবিতা মাত্রা কিংবা অন্ত্যমিল ছাড়াও হয় কিন্তু ছড়া নই। আশা করি 'ছড়ামর্শে ছড়া লেখার নিয়ম কানুনের বোধগম্য পড়ামর্শ পাবেন।
২.'বদ্ধমাত্রা এবং মুক্তমাত্রা সঠিক ব্যবহার':
আমরা অনেক সময় মাত্রা গুলিয়ে ফেলি। তাই ছড়া আবৃত্তি করতে একটু সমস্যায় ভুগতে হয়। আর যায় বলুন ছড়া আবৃত্তি না করতে পাড়লে তাকে আর ছড়া বলা যায় নাকি? আশা করি ছড়ামর্শ পড়ার পর মাত্রা নিয়ে আর সংশয় থাকবে না। আমার তো থাকছে না আপনি পড়ে দেখুন।
৩.'অন্ত্যমিলের মাত্রাসমতা'
৪.'স্বাধীন অন্ত্যমিলের ব্যবহার'
এখানে কিছু বলে নেই। আমরা আগেই জানতাম ছড়া মানেই অন্ত্যমিল হবে। যে ছড়া'য় অন্ত্যমিল যতটা উন্নত সেই ছড়াটি আবৃত্তিতে ততোটাই ভালো হয়। আমাদের অন্ত্যমিলের সঠিক ব্যবহার জানাবে ছড়ামর্শ বইটি।
৫.'সফল অন্ত্যমিলের ব্যবহার'
৬.'ছড়ায় ব্যবহৃত শব্দের বাহুল্য দোষ এবং কিছু অপ্রয়োজনীয় শব্দ এভয়েড'
আমরা না জেনে ছড়া'য় অতিরিক্ত শব্দ ব্যবহার করি। এই বিষয়ে খুব সুন্দর ভাবে লেখেছেন প্রবন্ধকার জনি হোসেন কাব্য।
৭.'ছড়ায় পাঞ্চ ব্যবহার'
পাঞ্চ ছড়াকে করে মজাদার। আসুন আমরা 'পাঞ্চ' এর ব্যবহার শিখি
৮.শিশুতোষ ছড়া, রূপক ছড়া ও সমকালীন ছড়াসহ আরো হরেক রকম ছড়া লেখার পড়ামর্শ পাবেন ছড়ামর্শে।
এছাড়া তিনি নবীন ও প্রবীণ ছড়াকারের ছড়ার উদাহরণ দিয়ে ছড়ামর্শকে করেছেন সকলের উপযোগী। আশা করি ছড়ামর্শের সঙ্গে আপনার সময়টা ভালো কাটবে।
এখন ছড়াকার জনি হোসেন কাব্যের কথা বলে নেই। তিনি একাধারে ছড়াকার, প্রবন্ধকার ও সম্পাদক। তার প্রকাশিত ছড়াগ্রন্থ হলো 'ছড়ার প্যাকেট', 'নেটওয়ার্কের বাইরে' এবং 'ছড়ার মিনার'। তাছাড়া তিনি সাপ্তাহিক জাতীয় শিশুকিশোর পত্রিকা 'কিশোর শিখা' সহ মাসিক শিশুকিশোর পত্রিকা 'ভোঁদৌড়' ও পাপড়িতে সম্পাদক হিসেবে কাজ করছেন। তাঁর ছড়া ইকরা নুরানি পুস্তকসহ বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশ হয়েছে। লেখকের সফলতা কামনা করি।

শনিবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

বিষণ্ণ ঈশ্বর

-মাহ্দী কবীর


স্মৃতির কথা বলতেই প্রফেসর একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বললো, আসলেই স্মৃতিতে জমে আছে কত শত গল্প, হৃদয়ের কোনো এক কোণে ধূসর-সোনালি ধূলিকণায় মুড়িয়ে থাকে তারা। বেলাশেষে চায়ের কাপে চোখ বুঝলেই চোখ জুড়িয়ে আসে কিংবা হাত পুড়িয়ে আসে কিছু স্মৃতি। স্মৃতির সম্মোহন গুলি অনেক সুন্দর হয়। মন তাকে ধরে রাখতে চাই, এই সম্মোহন যেন শেষ না হয়। অথচ সম্মোহনের পদস্খলনে আবিষ্কার করি আমি সেই ষাট বছরের বৃদ্ধ'কে ।সময়ের দৌড়ে আজ আমরা ক্লান্ত। প্রকৃতপক্ষে মানুষ কি বৃদ্ধ হয়?

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মফস্বল শহরে জন্ম হয় আমার।সেই সুবাদে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শৈশব কাটে। স্কুলের প্রথমদিনটি ছিল খুব মজার। বাবা আমাকে একটা সাদা শার্ট দিয়ে বলেছিল, 'এটা তোমার স্কুল ড্রেস।' আমি বলেছিলাম,' বাবা সাদা ড্রেস কেন? এখুনিতো ময়লা হয়ে যাবে!'
"সে জন্যই সাদা শার্ট, যেন ময়লা হলেই দেখা যায় এবং তা পরিষ্কার করতে হয়। যেন সাদা শার্টের মতোই তোমার মনও সর্বদা পরিষ্কার থাকে।" সে দিন থেকে সাদা শার্টটি আমার প্রিয় হয়ে উঠলো। কিন্তু সাদা শার্টের আরো যে রহস্য ছিল তা কে জানতো! কে জানতো এই সাদা শার্টের ভার আমার জন্য অসহনীয় হয়ে যাবে। এই ভার বহন করতে হবে অন্তিমকাল পর্যন্ত কে জানে! বাবাও আমাকে বলেনি। আমি স্কুলে গিয়ে আরো বুঝতে পেরেছিলাম সাদা শার্ট কেন অন্যান্য শার্টের মতো নয়। এই শার্ট যেন কোনো বাঁধুনিতে বেধে রাখে আমায়। সেই বাঁধুনি কি কোনো এক দায়িত্ব বা কর্তব্যের? হ্যা সেই শার্ট আমাকে করে শাসন, করে বারণ, আমাকে শিখাই নীতি নৈতিকতা। শিখাই ভালোবাসতে। এই শার্ট পড়ে ইচ্ছে করলেই আমি মিথ্যে বলতে পারিনা অর্থাৎ এই শার্টে আমি সর্বপুরি কিছুতে বাধা পড়া যাই, আমি থাকিনা সেই দূরান্ত পনা দস্যি ছেলে। তবুও কিভাবে যেন এই ইউনিফর্ম আমার মনে জায়গা করে বসলো কিছুতে ঠাহর করতে পারিনি। তাকেই বুঝি ছাত্র বলে। তাই আজও, এই বয়সেও খারাপ কাজ করতে ভয় পাই, যখন দেখি আমার গায়ে 'সাদা শার্ট' । তাহলে কি এখনো আমি ছাত্র? কতটুকু সম্মানের জায়গায় আছে এই শার্ট তা এক মাত্র ঈশ্বর জানেন। আসলে কিছুকিছু পরাধীনতা অনেক মধুর হয়। যেমন মায়ের হাতের শাসন, তা কি কখনো ভুলা যায়? অথবা ধরো ঘুড়ি। লাল ঘুড়ি , নীল ঘুড়ি , সাদা ঘুড়ি, কত রকম ঘুড়ি আকাশে উড়ে! তারাও কিন্তু পরাধীনতার সেই মধুর সাধ গ্রহণ করে। সুতোই ঘেরা তার অমিয় পরাধীনতা। যদিও কখনো কোনো ঘুড়ি স্বাধীন হতে চাই, সুতো ছিঁড়ে সেই আর বেশিক্ষণ উড়তে পারে না? মুখ থুবড়ে মাটিতে পড়ে সেই দুর্ভাগা সুতো ছেঁড়া ঘুড়ি । তাই সাদা শার্টের পরাধীনতা আমি ভালোবাসি। মায়ের শাসন, বাবার আদর কখনোই পরাধীনতা হতে পারে না। ঠিক সেই ভাবে সাদা শার্টও তোমায় শিকল পড়াইনা বরং মানুষ বানাই। এখন প্রায়ই একাকীত্ব বোধ করি। যখন মা- বাবা ও নানু ছিলেন ভুল করতে খুব মজা পেতাম। কারণ জানতাম মা এসে চোখ রাঙ্গিয়ে বলবে 'কবীর তুমি এটা ঠিক করোনি।' কিন্তু এখন সেই চোখ রাঙ্গানোর কেউ নেই। চায়ের কাপে আমার জীবন থমকে গেছে। চায়ের কাপে এক ঠোট চুম্বন যেন এক যুগ পিছিয়ে দেয় আমায়। পিছিয়ে যাই আমি অনেক পিছিয়ে, সময়কে প্রসঙ্গ কাঠামো রেখে। সময় কি প্রসঙ্গ কাঠামো অর্থাৎ স্থির থাকার পাত্র? না, তাই সেও চলছে স্মৃতিপট মাড়িয়ে। এখন শ্বাসপ্রশ্বাসের স্থায়িত্বকালটা বড্ড বেশিই বেমানান, বড্ড বেশিই বেড়ে গেছে।

প্রফেসরের কথা থামিয়ে করে ওয়েটার বলে উঠলো
স্যার, রঙ চা'য়ে কি চিনি কম হবে? প্রফেসর মাথা নেড়ে সম্মতি জানালেন 'হবে'। এতক্ষণ আমি চুপ করে স্যারের কথা শুনছিলাম। এখন কথা বলার সুযোগ পেয়ে হাত ছাড়া করেনি।বললাম স্যার আপনার প্রিয় মানুষ সম্পর্কে যদি কিছু বলতেন?

আমার প্রথম শিক্ষক আমার নানু।নানু কয়েক পাতা আরবি ছাড়া আর কিছুই জানতো না, অথচ তাঁর কাছেই আমার বাংলা, অংক ও ইংরেজির হাতেখড়ি। মজার কথা হলো তিনি(নানু) আমাকে পড়াতে পড়াতেই অনেক কিছু শিখে ফেলেছিল।সেই মুখটি আমার অনেক প্রিয়। যদিও আমার জীবনের সবচেয়ে বেশি বুকনি খেতে হয়েছে এই মুখটি থেকে।
অসমাপ্ত

মঙ্গলবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

বিষণ্ণ এক চা'য়ের চুমুক

বিষণ্ণ এক চা'য়ের চুমুক
-মাহ্দী কবীর



কোনো এক বিষণ্ণ বিকেলে
চা'য়ের চুমুকে- থমকে দাঁড়াই আমি
চঞ্চল আমি'র হয় মৃত্যু,
আমার মৃত প্রাণে জন্ম নাও তুমি।
মৃত্যু হয় আমার, চা'য়ের চুমুকে-
এক দীর্ঘ স্থায়িত্বের
বেড়ে যায় শ্বাসপ্রশ্বাস কিংবা স্পন্দন
আমার দেহে তোমার অস্তিত্বের।

হঠাৎ এক উষ্ণ অনুভবে- ভেঙ্গে যায় আমার মৃত্যুর ঘোর,
পুড়ে যায় আমার ঠোঁট কিংবা
সহস্রাধিক দুপুর।

অতঃপর আবিষ্কার করি সেই 'আমি'কে
বিষণ্ণ এক চা'য়ের চুমুকে!
জীবম্মৃত হয়ে বেঁচে থাকি 'আমি' আবার
বাঁচা যদি বলা হয় তাকে।।
বিষণ্ণ এক চা'য়ের চুমুকে।
▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂
টি স্টল, কুঞ্জছায়া ,চট্টগ্রাম
১২.০২.২০১৮