মঙ্গলবার, ২৩ আগস্ট, ২০১৬

!♥প্রণয়ানন্দে বর্ষণ ♥

   ★ প্রণয়ান্দে বর্ষণ★
                ----------------- মুহম্মদ কবীর
ফুটিছে হেথা কদম শাপলা
 সেথা নৃত্যে কাশফুল,
বসে আছি নিভৃতে একলা
ঝরিছে বরষার জল।
মম নিভৃত তনু ছুঁয়ে
ঝরিছে জল চুয়ে চুয়ে।
মরি আমি তাহার ছোঁয়ায়
তাহার প্রণয়ী ঘর্ষণে
এসো হে সখি ভিজাইবো তোমায়
এই নব বর্ষণে।

এসো হে সখি, খুলো দুই আখি
কিছু কথা হয়ে যাক দর্শনে,
বাজিলে বাজুক বিনা, ঝরিলে ঝরুক সখি
নিভৃত প্রণয় আসুক স্পন্দনে।

স্পন্দন ক্রন্দন, শ্রাবনো বর্ষণ
শত মেঘের চিত্ততোষনি
মত্ত চিত্তে, জলতরজ্ঞের নৃত্যে
ভেজা কেশের হৃদয়হরণী।
শ্রাবনো বর্ষণ, বৈরী গরজন
খুলিয়া গেছে শত বাঁধুনি।

কম্পন কম্পন, বাধিলো বন্ধন
বাড়িলো মোর স্পন্দন,
এসো হে সখি লেপিবো তোমায়
অমিয়ধারার বর্ষণ।

এসো হে সখি এসো প্রিয়তম
এসো হে শ্রাবণধারা এসো প্রিয়শম
শত সংশয় ভুলি
কেশের বাঁধন খুলি
কদম কেয়ার প্রণয়োৎসবে
যাবেগো তব সম।
ঝরুক আজি ঝর ঝর
তব নিভৃত প্রণয় নমঃ
এসো হে মোর সখি
এসো প্রিয়তম।
নূপুরের নৃত্যে বাজুক উঠি
প্রণয়গীত যায় গো ছুটি,
কদম-কেয়া যায়গো ফুটি
মোদের প্রণয় সম।
এসো হে মোর সখি
এসো প্রিয়তম।।

ওহে মোর একলা মন
কোন কাননে কি ফুটাইলি
কোন গগনের মুক্তা ছুঁইলি
সখি বিনে বাজিয়ে গেলি
প্রণয় সুরে বর্ষণ।
এসো হে সখি ভিজাইবো তোমায়
শ্রাবনো ধারার বর্ষণ।
নীরবে নিভৃতে বহিয়া যায় গো
আশাঢ় শ্রাবণ।
তোমারি তরে থরে বিথরে
সাজাইয়াছে ফুলে সবুজ আচলে
তাল মহুয়া বন।
এসো হে সখি ভিজাইবো তোমায়
শ্রাবণধারার বর্ষণ।।

পহেলা শ্রাবণ ১৪২৩ বাং
বিবাড়ীয়া।

বুধবার, ১৭ আগস্ট, ২০১৬

♥বিন্দুবিসর্গ ♥

        ♥বিন্দুবিসর্গ♥
                  ........ মুহম্মদ কবীর সরকার

চোখের রেটিনা দ্বারা তুলা        
                           তোমার   ঐ হাসি                  
     জমা হয়েছে হৃদয় মেমোরিতে,
তাকে কি যাই ভুলা?
                    ওগো প্রিয়সী
পারবোনা আমি তাকে ভুলতে

সে যে নিভৃতে আসে  মৃদু হাসে
                সতত ভাসে মনে,
সে যে দিবস রজনী বাজাই রাগিণী
              একাকিনী নিরজনে।

বঙ্গবীর

         বঙ্গবীর
             ......... মুহম্মদ কবীর সরকার
 
   আমি বীর বঙ্গের বীর
জ্বালাইবো বিভীষিকার জিঞ্জীর।
   আমি মরিবো, মরিবো মরে,
বারংবার মরিবো না ভয়ে-ডরে।
শত্রুসেনার স্টেনগানে
             মম বক্ষ লুটাইবো,
মম বঙ্গের দূর্বাদলে
           রক্তিম ফুলে ফুটিবো।
    হইয়া বঙ্গের বীর,
ফের আসিবো গঙ্গায় মেঘনায়
আমি ফের বাঁধিবো নীড়।
    শত তেজ শত সুভাস
শত রক্ত রং মাখিয়া অঙ্গে,
আমি ফের করিবো বাস
আমি ফের জন্মাবো বঙ্গে।

♥নৈঃশব্দ্যে শব্দচারী ♥

         ★  নৈঃশব্দ্যে শব্দচারী ★
                  -----------------মুহম্মদ কবীর সরকার

হয়তো তখন আমি তন্দ্রাচ্ছন্ন ছিলুম।তখন রাত দুটু কি তিনটে বাজবে বোধহয়।আকাশে হয়তো চন্দ্রকুমারী চন্দ্রিকা ও এক দুটু নীহারিকা  মিটমিট করে জলছিল। জ্যোৎস্নাকুমারী জ্যোৎস্না অবিরামভাবে গগন ছেদ করে নিঃসৃত হচ্ছে।তবে মাঝেমাঝে হইতো অকালজলদোদয়ে ভাটা পড়ছে চন্দ্রিকাময়ী রূপ যৌবন।তখন হয়তো চাঁদোয়া রজনীর বদলে বাসা বাধছে তমসালয়।মাঝেমাঝে ব্যাঙ ওর ঘ্যানঘ্যান শব্দ হচ্ছিল। ঝিঝি পোকাগুলো ক্লান্ত হয়ে পড়েছে,তাই তারা নীরবে অবস্থান করছে যারযার শান্তিনিকেতনে। কখনো মৃদু হাওয়া,কখনো ঝড়োহাওয়া বাতায়ন দিয়ে আমার নিদ্রালয়ে প্রবেশ করছে।
হয়তো তখন আমি তন্দ্রাচ্ছন্ন ছিলুম। সহসা অসম্ভাবিতরূপে আমি হেরিলুম, একটি ঘুটঘুটে কালো হাত বাতায়ন দিয়ে আমার  ঘুমালয়ে প্রবেশ করলো। অতঃপর সে হাত আমার  মোবাইল, বই, ক্যামেরা মুষ্টিবদ্ধ করছে।
হয়তো তখন আমি তন্দ্রাচ্ছন্ন ছিলুম। আমার চক্ষু সম্মুখে ঘটছে,ঘটেচলছে। কিছুতেই কিছু করতে পারছি না।শুধুই বিছানাতে কাতরাচ্ছি। এবং বজ্রশব্দে শব্দ করতে চেষ্টা করছি। কিন্তু শব্দ যেন আজ জটিল বাঁধুনিতে বাধা পড়ে আছে। তাই বজ্রশব্দ নৈঃশব্দ্য হয়েই পরে রইলো মোর শব্দালয়ে।তবু জাগতে পারলাম না।
তন্দ্রাচ্ছন্ন  নয় ঘুম,নয় সজাগ।  বহুক্ষণ তন্দ্রাচ্ছন্ন ও সজাগের সংগে লড়াই হলো আমার। বারবার যেন রবার্ট ব্রোসের মতো আমি হেরে চলছি। অবশেষে সজাগ হলাম।
সজাগ হয়ে আমি নিজেই একটু অবাক হলাম। এক রহস্য আবিষ্কার করলাম।
সহাজ হয়ে হেরিলুম,
ষোলকলায় পরিপূর্ণ চন্দ্র চন্দ্রিকাময়ী রূপ যৌবন অবিরামভাবে বিলি করছে মোর ঘুমালয়ে।বাতায়ন পাশে সারিবদ্ধ দেবদারু গাছছিল। ঝড়োহাওয়ায় বৃক্ষরাজির পত্র গুলি নৃত্য করছে।কিছুকালের জন্য হাওয়ার দল নীরবতা পালন করছে, এর সাথে বৃক্ষপত্র এর নৃত্য ও। অতঃপর সেকি নৃত্য......!

অতঃপর কিছু পত্র চন্দ্রিকা রমণীকে তার চলার পথে বাধা দিচ্ছে। এবং সে ছায়া আমার ঘুমালয়ে প্রবেশ করছে। যেন সেই ছায়া রূপ ধরেছে বিভীষিকাময় জ্যান্ত কায়া। সেই কায়া উন্মাদ নৃত্য করছে যেন এক জ্যান্ত মানবের ঘুটঘুটে কালো হাত আমার পড়ার টেবিলে ঘাটাঘাটি করছে কিছু একটা খোঁজছে হয়তো।
তখন কি আমি গভীর ঘুমে মগ্ন ছিলুম, না তন্দ্রাচ্ছন্ন ছিলুম, না সজাগ ছিলুম, তা ঠাহর করতে পারছিনে।মাঝেমাঝে ভাবছি হয়তো দেবদারু বৃক্ষের ছায়াটায়.....।কিন্তু চোখের সামনে তো দেখছি একটি জ্যান্ত হাত। নিজের চোখকে তো অবিশ্বাস করা যায় না।
অতঃপর উঠে বসলুম। এবং ডায়েরিতে  কিছু লিখলুম, ভাবছি এবার গভীর নিদ্রায়মাণ হবো। অতঃপর কখন নেত্র বুজলুম তা ঠিক ঠাহর করতে পারছি না। হয়তো তখন শেষ রাত্রির শুকতারাটি জেগে উঠেছে।হয়তো তখন ও অকৃপণ চিত্তে জ্যোৎস্নাকুমারী জ্যোৎস্না বিলি করছে।
হয়তো তখন আমি তন্দ্রাচ্ছন্ন ছিলুম। ফের অসম্ভাবিতরূপে হেরিলুম সেই কায়ার প্রেতবৎ রূপি কালো হাত। সে আমার প্রিয় ডায়েরিটি মুষ্টিবদ্ধ করছে। যেখানে আমার অনেক সাধনার লিখা কবিতা, গল্প, রম্য ইত্যাদি ছিল।
ফের হেরিলুম , সে পৃষ্টার পর পৃষ্ঠা উল্টাচ্ছে। কি যেন শন শন শব্দে পড়ছে, তা বুঝতে পারছিনে, হয়তো কোনো কবিতা হবে কেননা শন শন শব্দে একটা আবৃতি সুর ও খোঁজে পাচ্ছিলুম। তবে কি পড়ছে তা বুঝে উঠতে পারছি না।
অতঃপর আমি ভাবছি, কোনো অতৃপ্ত পাঠকই হতে পারে।আজ হয়তো তাঁর কোনো পুস্তকই মন ভরে নাই। তাই এই রাত্রিরে রবিরশ্মিতে আমার লিখা চুরি করে পড়ছে।যাক পড়ুক গে। কিন্তু সে কে একটু জিজ্ঞেস করে দেখা যাক------
অতঃপর আমি কয়লুম, কি?কে?কে তুমি?আমার ডায়েরি পড়ছো? আমার কবিতা পড়ছো?
কিন্তু কোন সারা শব্দ পেলুম না।সে একের পর এক পৃষ্ঠা উল্টাচ্ছে আর নিভৃত চিত্তে পড়েই যাচ্ছে। অতঃপর উচ্চ কন্ঠে চেঁচাইতে লাগিলুম, কিন্তু আমার যেন মনে হচ্ছে আমি চন্দ্রের পৃষ্ঠে চেঁচাচ্ছি, তাই শূণ্য ডিসেবল শব্দ আমার থেকে উৎপন্ন হল না। সেই ক্ষুধার্ত পাঠকের সাথে কিছু বন্ধু সুলভ কথা বলবো ভেবেছিলুম তা আর হল না। এতক্ষণে তাঁর সনে আমার ভাব ও হয়ে যেতে পারতো, তাতে বেশ লাভ ও হতো, কিন্তু কিছুই হল না। না আরেক বার চেষ্টা করে দেখি,,, আমি কইলাম--- পাঠাক সাহেব শুনছেন আমি আপনার সাথে একটু কথা বলতে চাই, তবে আপনি যদি কিছু মনে না করেন। এবার হয়তো সে রাগ করেছে পাঠক সাহেব তথা সেই প্রেতবৎ রূপি কালো হাত। সে উচ্চশব্দে শন শন করে চলে যাচ্ছে,এবং এরি সাথে আমার প্রিয় ডায়েরিটা নিয়ে যাচ্ছে।
অতঃপর আমি চিৎকার করে বললাম, কি? দয়া করে আমার ডায়রি টা নিয়োনা, আমার কবিতা নিয়োনা, গল্প নিয়োনা প্লিজ। কিন্তু কে শুনে কার কথা। আমার মনে হচ্ছে আমার চিৎকার শব্দালয়ে নৈঃশব্দ্যে শব্দচারী বিনা আর কিছু নয়। কেননা আমার শব্দ যন্ত্র সব যেন আজ অকেজো হয়ে পড়েছে।
অতঃপর, অতঃপর হয়তো, জ্যোৎস্নাকুমারী মেঘমল্লার অভ্যন্তরে ডুব দিলো। অতঃপর হয়তো সারা বিশ্বে বিশেষ করে আমার ঘুমালয়ে আধারের সুযোগ পেয়ে প্রেতবৎ নাচছে। হয়তো তখন উন্মাদ হাওয়া বইছিল।

তখন আমি কি করছিলুম তা বলতে পারবো না, হয়তো গভীর ঘুমে মুগ্ধ ছিলুম, নয়তো তন্দ্রাচ্ছন্ন।।

অতঃপর আমি জানিনে।

আমি এই নব প্রজন্মকে বলছি

   আমি এই নব প্রজন্মকে বলছি
           -------মুহম্মদ কবীর সরকার

এই তৃণঘাস পূর্বাকাশ ছঁইয়ে
আমি বিদীর্ণ বাংলার কোমলাঙ্গ সাজিয়েছি
সাজিয়েছি সহস্র জীর্ণ জড়তা জেরে।
রচিয়েছি সুপ্রিয় বাংলাদেশ 
তমসার বসুধা ঠেলে,
শুধুই,,,,
শুধুই ভাবি প্রজন্মের তরে।
প্রজন্ম, নব সচেতন প্রজন্ম।
আমি আমার তনু ছিঁড়ে
শুধুই তোমাদেরই তরে
রক্তে রঞ্জিত করেছি তৃণঘাস, ঐ পূর্বাকাশ।
আমার দেহের শেষ রক্ত বিন্দু রক্ত,
রক্তিম রংতুলি দিয়ে এঁকেছি, এই তৃণঘাসে
 ঐ পূর্বাকাশে চির যৌবনের প্রতীক 
এঁকেছি লাল সবুজের তসবির।
আমি এই নব প্রজন্মকে বলছি,
আমি তোমাকে বলছি,
আমি বলছি এই বংগের লুব্ধ আত্মগ্রাহী জনতাকে।
তারা কি আমার সেই তসবির বয়ে বেড়াই
নাকি,,,
নাকি হারিয়ে গেছে অন্য তসবিরের নেশায়।

এই তৃণঘাস পূর্বাকাশ ছুঁয়ে,
আমি এই বাংলার ওষ্ঠে, জিভে,
কোমলতালুতে কন্ঠনালিতে।
মিশিয়েছি আমার সমস্ত রক্ত
মিশিয়েছি শত যৌবনের সংগীত।
মিশিয়েছি এই তৃণঘাসে ঐ পূর্বাকাশে
হয়তো বা ঢাকার রাজপথে।
আপন সখার মতো,
শুধুই তোমাদেরই তরে
আমি এই নব প্রজন্মকে বলছি।
বলছি এই বাংলার অতি শিক্ষিত সমাজকে
তারাকি বাংলাকে ব্যবচ্ছেদ করে
আমার রক্ত বিদীর্ণ করছে?
তারা কি আমায় উপেক্ষা করে, অপসারণ করে
সেই ওষ্ঠে, জিভে, কোমলতালুতে
অন্যরকম আস্বাদন নিচ্ছে...?

এই তৃণঘাস পূর্বাকাশ ছুঁয়ে
আমি পড়তে চেয়েছিলাম সবুজ শাড়ি
হয়তো বা পড়েছিলাম।
আমি পড়তে চেয়েছিলাম রক্তিম রবির মতো
চির যৌবনের লাল টিপ,
হয়তো পড়েছিলাম।
সাজতে চেয়েছিলাম এই বংগের কন্যা
কিন্তু,,,,,
কিন্তু তারা আমায় সাজতে দেয়নি
হ্যাঁ হ্যাঁ সাজতে দেয়নি।
তাদের ভেতর মনুষ্যত্ব নেই
তারা পলদ, শ্বাপদ জন্তুর মতো
তারা আমায় ব্যবচ্ছেদ করে কেটে নিয়েছে
ছিঁড়ে নিয়েছে দেহের সব কয়টি পলল।
আমি এই নব প্রজন্মকে বলছি
আমি বলছি এই বাংলার যবসমাজকে
আমি তোমায় বলছি
তোমরা কি আজও যৌবনের তাড়নায়
আমাদের তাড়িত করছো?
সেই একাত্তরের পলদ পশুর মতো
নীলখোর জলসরপিনীর মতো।

এই তৃণঘাস পূর্বাকাশ ছুঁয়ে
একাত্তর, বায়ান্নের পটভূমি ছঁইয়ে
ছিয়াত্তরের মন্বন্তর, বাঁশের কেল্লা ছুঁয়ে,
ছুঁয়ে ঐ পলাশীর প্রান্তর,
হয়তো বা কৈবর্ত বিদ্রোহ ছুঁয়ে
ছুঁয়ে সিধু কানুর সাঁওতাল বিদ্রোহ।
হ্যাঁ আমি এনেছি--
হ্যাঁ আমরা এনেছি,
এনেছি এক সর্গীয় আস্বাদন।

তোমরা কি কখনো দেখনি
কি করে মাকড়সা ঘর বুনে,
বন্ধুর পথ পেড়িয়ে শত সহস্র তন্তু দিয়ে
দিয়ে শত প্রেম, বুনে তার স্বর্ণালয়
তোমরা কি কভি দেখছ?

শত, সহস্র তন্তু দিয়ে
দিয়ে জমানো প্রেম,
আমি আমার বাংলাকে বুনেছি।
আমি, আমরা তথা সহস্র শান্তিপ্রিয় বীরাত্মা  
আমার বাংলাকে বুনেছি।
আমি এই নব প্রজন্মকে বলছি
এই বাংলার সচেতন নাগরিকদের বলছি,
আমি তোমায় বলছি......
তোমরা কি আজ ও আমার দেওয়া
সোনার হরিণকে লালন পালন করছো ?
নাকি.......?

১-১-১৬ইং
বাড়াই,কসবা,বি-বাড়ীয়া।


©মুহম্মদ কবীর সরকার 

শূণ্য

     শূণ্য
      ....... মুহম্মদ কবীর সরকার

তুমি বলেছিলে,"নীলিমা হবে
আমি হব নীল,
মেঘ বালিকার ছুটি হবে
আকাশে উড়বে শঙ্গচিল।
কিন্তু কোথা,
গেল তোমার কথা!

তুমি বলেছিলে, "সুবাসিনী হবে
আমি হব সুবাস,
নীরবে নিভৃতে রবে
রবে বার মাস।
মোর ডায়েরিতে রবে
হয়ে সুবাসহীন চেপটা গোলাপ,
সতত তুমি বলে যাবে
ভালবাসার আলাপ"।
কিন্তু কোথা,
গেল তোমার কথা!

তুমি বলেছিলে, "সুকেশিনী হবে
আমি হব সুবর্ণ,
আমি নাকি নোবেল পাবো
শুধু তোমার জন্য"।
কিন্তু কোথা,
গেল তোমার কথা,
সেই নোবেল পাওয়া কবিতা!

তুমি জানো,
ডায়েরিটা চুরি গেছে
নোবেল টা রয়েছে রাজকোষে,
মেঘ বালিকা সতত ভাসে
আমার এই আকাশে।
কি পেলাম সখা, তোমায় ভালবেসে...?

১৩/০৭/১৬ইং

©বর্ণলীলার যেকোনো সদস্য।

কবিতা

~কবিতা~
      ............ মুহম্মদ কবীর সরকার

অতঃপর, অতঃপর নিরবতা সাঙ্গ করে
ঘুটঘুটে তমসার রোধ, অবরোধ পশ্চাতে ফেলে
যে আমার চিত্তপটে নৃত্য তুলে
সে আমার কবিতা,
সে আমার তিমির বিদারী কবিতা।

যে আমার বসন্তকুমারীর সঙ্গে সঙ্গ দেয়
যে আমার হৃদ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে
বসন্তকুমারীর রূপের বর্ননা রচে
বলে দেয় তাঁর সবুজ কেশের খোপাঁয়
গাথা লাল,নীল,হলুদ আরো কতো,
আরো কত রঙ্গ বেরঙ্গের ফুলে কথা
বলে দেয় তার চঞ্চল মনের চঞ্চলতা
সে আমার কবিতা।
সে আমার বসন্তকুমারীর কবিতা।

আবার কখনো আমার কবিতায় ডানা গজায়
হয়ে যায় সঙ্গচিল, লক্ষিপেঁচা হয়তো বা গানের পাখি
ঢুকে যায় রবীন্দ্রসংগীতে বা জীবনান্দের রূপসিবাংলায়
হয়তো বা মিশে যায় কোনো এক চিত্রশিল্পির রংতুলিতে
হয়ে যায় মনোহারিণী তছবির ।
জয় করে এই বিশ্বকে।
তখন,তখন আমি একটু মুচকি হাসি
তখন আমি আমার কবিতাকে গভীরভাবে জড়িয়ে ধরি
ললাটে চুমু আঁকি
আর একটু বেশি ভালবাসি।
অতঃপর,অতঃপর আমি বাংলার ধূলাবালিতে হাটি
হাটি চিকচিকে চুরাবালিতে
আমার কবিতা নৃত্য তুলে কৃষক শমিকের বাহুতে
পাল তুলে তিতাস প্রবাহিনীর ময়ূরপক্ষীতে ।
আমার কবিতা থাকে সদা এই বাংলার
কৃষাণ কৃষাণীর বিষাদ হরষে।
হয়ে থাকে আপন সখা গ্রীষ্ম শীত বরষে।

অতঃপর, অতঃপর একদিন
দুঃখিত, একদিন নয়, বহুদিন
বহুদিন ধরে, বহু অব্দ ধরে,বহু যুগ ধরে
আমি এই বাংলার ধূলাবালি বক্ষ ঠেসে
পিষ্ঠ ঘেসে, কপোলে লেপেছি।
এই বাংলা তার শীতলবক্ষ জড়িয়ে ধরে
আমার ললাটে চুমু এঁকেছে।
আমার অশান্ত মন শান্ত করেছে
শুনিয়েছে ঘুমপারানির গান।
সেই গান তথা শব্দগুচ্ছ গুছিয়েছি
আমি আমার কবিতা রচিয়েছি
সে পূরব পচ্চিম তথা সমগ্র বাংলার কবিতা।
সে আমার কবিতা।

অথচ আমি তো দেখিনি,
আমার কবিতা চলার পথে,
ছন্দের নৃত্যে কোনো ভুলতো খোঁজে পাইনি।
তবে কেন আমার কবিতা বাজেয়াপ্ত  হবে
নিষিদ্ধ হবে শিক্ষিত সমাজে ।
জানো এই কবিতা রচিতে কতো শব্দ,
কতো দাড়ি,কমা ব্যয় হয়েছে
কতো গুলো পৃষ্ঠা গচ্ছা গেছে।
আর কতকাল ধরে কলম হাতে লড়েছি
হ্যাঁ   হ্যাঁ যোদ্ধ করেছি।।

এক শ্রাবণ রাতে যখন এক সুবাসিনী
তার খুলা কেশের সুবাস ছড়িয়ে,
সুস্মিতাময়ী হাসি হেসে,
পায়ের নূপুরের নৃত্যে আমার পাশে এসেছিল।
জানি, সেথায় তুমি থাকলে ও একখানা কবিতার চরণ লিখতে,,,
হয়তোবা প্রিয় কবিতা আবৃতি করতে।
যে তোমার নিভৃত ভাব প্রকাশ করে তাই কবিতা।
হ্যাঁ হ্যাঁ তাই কবিতা।

অথচ আমার কবিতা বাজেয়াপ্ত করে,
এক দন'ত ভাজ্ঞা কবিতা আবৃতি করতে আমায় বলে
যার প্রতিটি শব্দগুচ্ছ আমার অজানা,
যার প্রতিটি স্বর আমার অচেনা।
যার থেকে আমি কোনো কাব্যরস খুঁজে পাইনা।

অথচ, অথচ আমি জানতাম
যে আমার মনের আবেগ প্রকাশ করে, তাই কবিতা।
আমি জানতাম,,,
যার ছন্দে নৃত্য আছে,চলচিত্তের অমৃত আছে
আছে আকাশে মিলিবার ডানা
যার প্রতিটি শব্দগুচ্ছ আমার চিরচেনা
আমি জানতাম,
যাকে পারা যায় স্বাধীনভাবে আবৃতি করতে
যার দ্বারা পারা যায় সখার মন ভরতে
যেথায় থাকে, কবির মনের সপ্তবরণের প্রজাপতির পাখা,
যার প্রতিটি চরণ ইচ্ছেনদীর মতো আঁকাবাঁকা।
সে-ই কবিতা
 হ্যাঁ হ্যাঁ তাই কবিতা।
আমি জানতাম
যে অবিরাম ওষ্ঠে জিভে আন্দোলিত হয়
কোমলতালু কন্ঠনালিতে নৃত্যতুলে
বাতাসের চিত্তে দুলে
তাই কবিতা।
তাই দন'ত ভাজ্ঞা কবিতা, কবিতা হতে পারে না
হয়তো অন্যকিছু হতে পারে
হতে পারে তমসার ভেরী
হতে পারে বেশি বাড়াবাড়ি।
যার অশরীরিণী প্রাণে থাকতে পারেনা মেদুর চন্দ্রিমা
থাকতে পারে না প্রেমের অনুভূতি
যার অশরীরী প্রাণে থাকতে পারে না মায়ের ভালবাসা
দিদির আদুর, ছোটখাট জগড়া।
তাইতো আমি,আমরা তথা সহস্র মাতৃপ্রিয় বীরাত্মা
কলম হাতে লড়েছি
হ্যাঁ হ্যাঁ যুদ্ধ করেছি,
রচিয়েছি আমার প্রিয় কবিতা,
সে পূর্বপচ্চিম সমগ্র বাংলার কবিতা।
সে আমার কবিতা।



১৪/০২/২০১৬