বুধবার, ১৭ আগস্ট, ২০১৬

♥নৈঃশব্দ্যে শব্দচারী ♥

         ★  নৈঃশব্দ্যে শব্দচারী ★
                  -----------------মুহম্মদ কবীর সরকার

হয়তো তখন আমি তন্দ্রাচ্ছন্ন ছিলুম।তখন রাত দুটু কি তিনটে বাজবে বোধহয়।আকাশে হয়তো চন্দ্রকুমারী চন্দ্রিকা ও এক দুটু নীহারিকা  মিটমিট করে জলছিল। জ্যোৎস্নাকুমারী জ্যোৎস্না অবিরামভাবে গগন ছেদ করে নিঃসৃত হচ্ছে।তবে মাঝেমাঝে হইতো অকালজলদোদয়ে ভাটা পড়ছে চন্দ্রিকাময়ী রূপ যৌবন।তখন হয়তো চাঁদোয়া রজনীর বদলে বাসা বাধছে তমসালয়।মাঝেমাঝে ব্যাঙ ওর ঘ্যানঘ্যান শব্দ হচ্ছিল। ঝিঝি পোকাগুলো ক্লান্ত হয়ে পড়েছে,তাই তারা নীরবে অবস্থান করছে যারযার শান্তিনিকেতনে। কখনো মৃদু হাওয়া,কখনো ঝড়োহাওয়া বাতায়ন দিয়ে আমার নিদ্রালয়ে প্রবেশ করছে।
হয়তো তখন আমি তন্দ্রাচ্ছন্ন ছিলুম। সহসা অসম্ভাবিতরূপে আমি হেরিলুম, একটি ঘুটঘুটে কালো হাত বাতায়ন দিয়ে আমার  ঘুমালয়ে প্রবেশ করলো। অতঃপর সে হাত আমার  মোবাইল, বই, ক্যামেরা মুষ্টিবদ্ধ করছে।
হয়তো তখন আমি তন্দ্রাচ্ছন্ন ছিলুম। আমার চক্ষু সম্মুখে ঘটছে,ঘটেচলছে। কিছুতেই কিছু করতে পারছি না।শুধুই বিছানাতে কাতরাচ্ছি। এবং বজ্রশব্দে শব্দ করতে চেষ্টা করছি। কিন্তু শব্দ যেন আজ জটিল বাঁধুনিতে বাধা পড়ে আছে। তাই বজ্রশব্দ নৈঃশব্দ্য হয়েই পরে রইলো মোর শব্দালয়ে।তবু জাগতে পারলাম না।
তন্দ্রাচ্ছন্ন  নয় ঘুম,নয় সজাগ।  বহুক্ষণ তন্দ্রাচ্ছন্ন ও সজাগের সংগে লড়াই হলো আমার। বারবার যেন রবার্ট ব্রোসের মতো আমি হেরে চলছি। অবশেষে সজাগ হলাম।
সজাগ হয়ে আমি নিজেই একটু অবাক হলাম। এক রহস্য আবিষ্কার করলাম।
সহাজ হয়ে হেরিলুম,
ষোলকলায় পরিপূর্ণ চন্দ্র চন্দ্রিকাময়ী রূপ যৌবন অবিরামভাবে বিলি করছে মোর ঘুমালয়ে।বাতায়ন পাশে সারিবদ্ধ দেবদারু গাছছিল। ঝড়োহাওয়ায় বৃক্ষরাজির পত্র গুলি নৃত্য করছে।কিছুকালের জন্য হাওয়ার দল নীরবতা পালন করছে, এর সাথে বৃক্ষপত্র এর নৃত্য ও। অতঃপর সেকি নৃত্য......!

অতঃপর কিছু পত্র চন্দ্রিকা রমণীকে তার চলার পথে বাধা দিচ্ছে। এবং সে ছায়া আমার ঘুমালয়ে প্রবেশ করছে। যেন সেই ছায়া রূপ ধরেছে বিভীষিকাময় জ্যান্ত কায়া। সেই কায়া উন্মাদ নৃত্য করছে যেন এক জ্যান্ত মানবের ঘুটঘুটে কালো হাত আমার পড়ার টেবিলে ঘাটাঘাটি করছে কিছু একটা খোঁজছে হয়তো।
তখন কি আমি গভীর ঘুমে মগ্ন ছিলুম, না তন্দ্রাচ্ছন্ন ছিলুম, না সজাগ ছিলুম, তা ঠাহর করতে পারছিনে।মাঝেমাঝে ভাবছি হয়তো দেবদারু বৃক্ষের ছায়াটায়.....।কিন্তু চোখের সামনে তো দেখছি একটি জ্যান্ত হাত। নিজের চোখকে তো অবিশ্বাস করা যায় না।
অতঃপর উঠে বসলুম। এবং ডায়েরিতে  কিছু লিখলুম, ভাবছি এবার গভীর নিদ্রায়মাণ হবো। অতঃপর কখন নেত্র বুজলুম তা ঠিক ঠাহর করতে পারছি না। হয়তো তখন শেষ রাত্রির শুকতারাটি জেগে উঠেছে।হয়তো তখন ও অকৃপণ চিত্তে জ্যোৎস্নাকুমারী জ্যোৎস্না বিলি করছে।
হয়তো তখন আমি তন্দ্রাচ্ছন্ন ছিলুম। ফের অসম্ভাবিতরূপে হেরিলুম সেই কায়ার প্রেতবৎ রূপি কালো হাত। সে আমার প্রিয় ডায়েরিটি মুষ্টিবদ্ধ করছে। যেখানে আমার অনেক সাধনার লিখা কবিতা, গল্প, রম্য ইত্যাদি ছিল।
ফের হেরিলুম , সে পৃষ্টার পর পৃষ্ঠা উল্টাচ্ছে। কি যেন শন শন শব্দে পড়ছে, তা বুঝতে পারছিনে, হয়তো কোনো কবিতা হবে কেননা শন শন শব্দে একটা আবৃতি সুর ও খোঁজে পাচ্ছিলুম। তবে কি পড়ছে তা বুঝে উঠতে পারছি না।
অতঃপর আমি ভাবছি, কোনো অতৃপ্ত পাঠকই হতে পারে।আজ হয়তো তাঁর কোনো পুস্তকই মন ভরে নাই। তাই এই রাত্রিরে রবিরশ্মিতে আমার লিখা চুরি করে পড়ছে।যাক পড়ুক গে। কিন্তু সে কে একটু জিজ্ঞেস করে দেখা যাক------
অতঃপর আমি কয়লুম, কি?কে?কে তুমি?আমার ডায়েরি পড়ছো? আমার কবিতা পড়ছো?
কিন্তু কোন সারা শব্দ পেলুম না।সে একের পর এক পৃষ্ঠা উল্টাচ্ছে আর নিভৃত চিত্তে পড়েই যাচ্ছে। অতঃপর উচ্চ কন্ঠে চেঁচাইতে লাগিলুম, কিন্তু আমার যেন মনে হচ্ছে আমি চন্দ্রের পৃষ্ঠে চেঁচাচ্ছি, তাই শূণ্য ডিসেবল শব্দ আমার থেকে উৎপন্ন হল না। সেই ক্ষুধার্ত পাঠকের সাথে কিছু বন্ধু সুলভ কথা বলবো ভেবেছিলুম তা আর হল না। এতক্ষণে তাঁর সনে আমার ভাব ও হয়ে যেতে পারতো, তাতে বেশ লাভ ও হতো, কিন্তু কিছুই হল না। না আরেক বার চেষ্টা করে দেখি,,, আমি কইলাম--- পাঠাক সাহেব শুনছেন আমি আপনার সাথে একটু কথা বলতে চাই, তবে আপনি যদি কিছু মনে না করেন। এবার হয়তো সে রাগ করেছে পাঠক সাহেব তথা সেই প্রেতবৎ রূপি কালো হাত। সে উচ্চশব্দে শন শন করে চলে যাচ্ছে,এবং এরি সাথে আমার প্রিয় ডায়েরিটা নিয়ে যাচ্ছে।
অতঃপর আমি চিৎকার করে বললাম, কি? দয়া করে আমার ডায়রি টা নিয়োনা, আমার কবিতা নিয়োনা, গল্প নিয়োনা প্লিজ। কিন্তু কে শুনে কার কথা। আমার মনে হচ্ছে আমার চিৎকার শব্দালয়ে নৈঃশব্দ্যে শব্দচারী বিনা আর কিছু নয়। কেননা আমার শব্দ যন্ত্র সব যেন আজ অকেজো হয়ে পড়েছে।
অতঃপর, অতঃপর হয়তো, জ্যোৎস্নাকুমারী মেঘমল্লার অভ্যন্তরে ডুব দিলো। অতঃপর হয়তো সারা বিশ্বে বিশেষ করে আমার ঘুমালয়ে আধারের সুযোগ পেয়ে প্রেতবৎ নাচছে। হয়তো তখন উন্মাদ হাওয়া বইছিল।

তখন আমি কি করছিলুম তা বলতে পারবো না, হয়তো গভীর ঘুমে মুগ্ধ ছিলুম, নয়তো তন্দ্রাচ্ছন্ন।।

অতঃপর আমি জানিনে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন