
(এক)
ভাগ্যিস বাপদাদার বেশ টাকা কড়ি ছিল, এই রকম একটা বাড়ী পেয়েছি এই বন্দর নগরীতে।কর্ণফুলীর কুল থেকে পুবের বারান্দায় সূর্যটা যেন প্রতিদিন চায়ের কাপে চুম্বন করেই জেগে ।দক্ষিণের বারান্দার গল্পটাও কিন্তু অপ্রীতিকর নয় বটে। হাজারো ফুল যেন আমার এই বারান্দায়। এমন কোনো ঋতু নেই যে ফুল থাকে না, ঝুমকা লতা ফুল ব্যালকনি ছাড়িয়েছে যেন উকি দিয়েছে বাহির পানে। ভোরের পাগলা হাওয়া যেন ফুল থেকে ফ্লেবার চুরি করে আমাতে সমর্পন করে। ছাদটাও সাজিয়েছি সবুজে সবুজে। কোথাও ঘাসের জুবড়ি, কোথাও ছোটোছোটো ফুল ও ফল গাছের টব রেখে দিয়েছি। চন্দ্রমল্লিকা ও ডালিয়ার মাঝে রেখেছি বার্ড অব প্যারাডাইস ফুলের টব। আমার বাগানে হাঁটলে কেউ কেউ ঝোপঝাড়ের ভিতর প্লামেরিয়া ফুলও পেয়ে যেতে পারেন।
ছোটখাটো একটা পার্কই বলা যেতে পারে। বসার জন্য বেশ কয়েকটা জায়গাও রেখেছি। কে আর বসবে!আমিই বসি, যখন ইচ্ছে হয় তখনি। কর্ণফুলীর যৌবন যেন আমার হাতেই মাপা। আপাতত সঙ্গিহীন জীবনে সেই আমার প্রেমিকা। আর কি লাগে এই জীবনে- প্রেমিকার মতো নদী, পাহাড়ি বাগানের মতো ছাদ,আহ! সত্যিই ভাবতে গেলেই আহ্লাদে ঘুম পাই। বেশ কিছু নাম না জানা ফুল গাছ এনেছিলাম। তারাও মিলেমিশে আছে এইখানে। যদিও আমি পদার্থের ছাত্র , কাক ডাকা ভোরে কিংবা দিন রাত্রির সন্ধিক্ষণে চা'য়ের শরীর মাপতে মাপতে কবি হয়ে যাই, কবি হওয়া ছাড়া কি উপায় আছে? চোখের কোণঘেঁষে কর্ণফুলীর যৌবন আসে আবার যায়- আহহা কিনা বেশ লাগে কর্ণফুলি মেয়েটাকে, ইয়া বড় এক সূর্য-টিপ দিয়ে সে জেগে উঠে যৌবন ভরা দেহে তারপর সন্ধ্যাবতি জ্বেলে ঘুমিয়ে পড়ে আমার আগে। তারপর আমিও ঘুমিয়ে যাই তার একটি ছবি একেঁ_
"একটা ছবি আঁকি আমি- শুধুই কল্পনায়
প্রেমিক হতে গিয়ে আমি- শিল্পী হয়ে যাই।
ওই টুকুনি চেয়েছিলাম শুধু তোমায় ভেবে'ই
আমার কাছে 'ভালোবাসা'; নীরব তোমার ছবি'ই।"
(দুই)
বাবা ব্যবসার কাজে মাসের সিংহভাগ অংশই ঢাকায় কাটান। মা চবির বাংলা প্রভাষক।ছোট বোন চট্টগ্রাম কলেজে পড়ে। সেই সুবাদে আমরা তিনজনই এত্তো বড় বাড়ির বাসিন্দা। অবশ্যই বাড়ির সবটাই বাড়া দিয়ে দিয়েছি।পাশের ফ্ল্যাটের আঙ্কলের কয়েকমাসের ভাড়া নাকি মায়ের ব্যাঙ্ক একাউন্টে যায়নি। তাই মা আঙ্কলকে বাড়ি ছাড়তে বলে দিয়েছেন। আঙ্কলও বাড়ি ছেড়ে দিয়েছেন। নতুন ভাড়াটিয়া এক তারিখে উঠাবার কথা আছে। আমরা ভাইবোন বাড়ির ঝামেলায় থাকিনা অবশ্যয়।
প্রতিদিনকার মতো দোসরা মার্চও ভোরের সূর্যউদয় দেখার জন্য আমার প্রিয় পুবের বারান্দায় বসলাম। এক হাতে চায়ের কাপ ধরে অন্য হাতে সৈয়দ আলী আহসানের বিখ্যাত কবিতা
'আমার পূর্ব বাংলা' আবৃত্তির অপেক্ষায় ছিলাম। হঠাৎ পাশের বাড়ির.... ও হে ভুলেই গেছি, আপনাদের নতুন বাড়াটিয়ার কথা বলাই তো হলো না।!আঙ্কলরা চারজন। আঙ্কলের বয়স পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই। ইদানীংকালে একটু আকটু রোগেই ভোগছেন বোধ হয়। আন্টি একটু মোটাসোটাই বটে। বয়স সাতেকের একটি ছেলে আর কলেজেপড়ুয়া একটি মেয়ে আছে। মেয়েটার চুল গুলি বেশ লম্বা! আমার মনে হয় চুল গুলি টেনে টেনেই লম্বা করেছে। কেননা ভীষণ পাজী একটা মেয়ে। আমার লম্বা চুল ভালো লাগে। কিন্তু এই মেয়েটাকে মুটেও না। যেকোনো মেয়ে কিংবা ছেলেকে ঝগড়া করে কুপোকাত করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে এই মেয়েটা। প্রথম দিনেই আমার ছাদের বাগানে ডুকে আমাকেই শতো কথা শুনিয়ে দিলো অথচ আমার বাগানে যাওয়ার অনুমতি নেই কোনো ভাড়াটিয়ার। আর চোখ দুটো যেন চোখেতেই সীমাবদ্ধ নেই, এক একটা তীক্ষ্ণ বিষাক্ত তীর। আমি সেই দিনই মাকে বলেছিলাম 'মা এই ভাড়াটিয়াকে এই মাসেই বিদায় করো' মা বললো, 'কেন! ভালোই তো তারা' প্রথম দিন এসেই মেয়েটা আমার মা বোনকে কব্জা করে নিয়েছে।তাই মা বলছে ভালো।